বিরোধিতা: এনআরসির প্রতিবাদে বালুরঘাটে মিছিল এসইউসির। ছবি: অমিত মোহান্ত
সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। বুধবার সেই বিল পেশ হবে রাজ্যসভায়। তার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) সরগরম রাজনীতি। সেই আঁচ পড়েছে জেলাতেও। বিজেপি ‘সিএবি’ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত হলেও, বিরোধীরা এ নিয়ে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে।
দলের অন্দরমহলের খবর, তৃণমূল শিবির ওই বিল নিয়ে ‘দোটানা’য় পড়েছে। দলের নেতাদের একাংশের মতে, সিএবি বিলের বিরোধিতা করা হলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলকে ‘হিন্দু-বিরোধী’ দল বলে প্রচার করার সুযোগ পেয়ে যাবে বিজেপি। আর তা সমর্থন করলে তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে সিএবি বিল ছেড়ে আপাতত এনআরসি-কেই প্রচারের মুখ করার কৌশল নিতেপারে তৃণমূল।
দলীয় সূত্রে খবর, অসমে এনআরসি-র পরে যে লক্ষ লক্ষ বঙ্গভাষীর নাম বাদ পড়েছে, সেই তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। তার পুনরাবৃত্তি যাতে এ রাজ্যে না হয়, সে জন্য পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না বলেও প্রচার করে ‘বঙ্গভাষীদের’ পাশে থাকার বার্তাও দিচ্ছে শাসকদল। জেলা তৃণমূল সভাপতি অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘এনআরসি বাংলায় হবে না। আমরা কাউকেই দেশ ছাড়তে দেবো না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ নিয়ে প্রচার করা হবে। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি মানুষকে বোঝাব।’’
বামফ্রন্ট শরিক আরএসপি নেতৃত্ব এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেনা। দলীয় সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের একটি বিরাট অংশের বাসিন্দা বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থী। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করলে ওই ভোটব্যাঙ্ক ‘ক্ষুব্ধ’ হতে পারে, তা ভেবে আপাতত বিল নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তার পরেই এ নিয়ে দলে আলোচনা করে বিবৃতি দেওয়া হতে পারে। আরএসপি রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই বিল নিয়ে দলে এখনও আলোচনা করা হয়নি। বৈঠকের পরেই এ নিয়েমন্তব্য করব।’’
বাম-তৃণমূল যখন এই বিলের সমর্থনের প্রসঙ্গে দ্বিধায় রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে সিএবি বিল নিয়ে জোরদার প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, বাংলাদেশ থেকে আসা প্রত্যেক শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিতে বিজেপি যে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তা দিতে প্রচার শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা প্রত্যেক শরণার্থীকে আমরা বলতে চাই, ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের নাগরিকত্ব দেব। বিজেপি সরকার শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই এই বিল এনেছে।’’ তিনি জানান, সাধারণ মানুষ যাতে কোনও বিভ্রান্তিতে দুশ্চিন্তায় না পড়েন সে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করবে জেলা বিজেপি।