সন্ধ্যা হলেই মোটরবাইক নিয়ে দোকানের সামনে হাজির হয় চার যুবক। তাঁরা এলেই দিয়ে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এমন কথাই শোনালেন এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকার এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ১৬ বছর ধরে এই এলাকায় ব্যবসা করছেন, শুরুর দিন থেকেই দিতে হচ্ছে তোলা। তাঁর কথায়, ‘‘একবার ছেলে প্রতিবাদ করেছিল বলে ওরা বাড়িতে বোমা মেরেছিল। দু’মাস দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ৮০ টাকা থেকে শুরু করেছিলাম এখন ৫০০ হয়েছে। জানি না কোথায় গিয়ে ঠেকবে।’’ একই অভিজ্ঞতা ওই এলাকার একাধিক ব্যবসায়ীদের। তোলাবাজি ছাড়াও এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় রেলের জমি দখল, বেআইনি তেলের কারবারের কথাও। মাঝেমধ্যে পুলিশি অভিযান চলে ঠিকই। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাতে পরিস্থিতি বদলায় না।
এনজেপি, ফুলবাড়ি পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি ফুলবাড়িতে শিলিগুড়ি পুরসভার জল প্রকল্পের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সেই বিষয়ে রবিবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসক ও পুরসভার কমিশনারকে ফোন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি জমি দখলের চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। পুলিশ ও প্রশাসনকে স্পষ্ট নির্দেশ নিয়েছি কোথাও কোন তোলাবাজি, জমি দখলের অভিযোগ পেলে রং না দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’ মন্ত্রী উদ্যোগী হওয়ায় তাঁকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেয়র।
রবিবার গৌতম দেবের বিধানসভা এলাকার জলেশ্বরীতে সভা করতে এসে তোলাবাজি নিয়ে মন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ছাদ ঢালাই হচ্ছে দেখলেই এখন তোলাবাজরা বন্দুক নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যায়।’’
এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকা, সাউথ কলোনি, মাইকেল কলোনি, ভোলোমোড়, সূর্যসেন কলোনি, রেল স্টেশন মাঠ লাগোয়া এলাকা সহ বিস্তীর্ণ জায়গায় রেলের জমি দখল করে লক্ষ-লক্ষ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একাধিক মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ইস্টার্ন বাইপাস ও ফুলবড়িতে জাল নথি তৈরি করে জমি দখলে সক্রিয় রয়েছে একাধিক চক্র। তোলা আদায়, চোরাই তেল, বেআইনি মদের কারবারে এনজেপিতে থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা ওঠে বলেই সূত্রের খবর। আর তা ঘিরে এনজেপিতে হয়েছে নানা গোষ্ঠী, হচ্ছে সংঘর্ষও।
এসব রুখতে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেই জানান শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনা। বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’