মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে গাড়ি কিনেছেন। অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে আপনার নামে। আপনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু এক দিন হঠাৎ জানতে পারলেন গাড়ি আপনার বাড়ির দরজায় সামনে বা গ্যারাজে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওই গাড়ির মালিকানা আপনার নেই! সরকারি ওয়েবসাইটই জানাল যে, ওই গাড়ির মালিক অন্য কেউ। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। এমনই সমস্যাতেই পড়েছেন উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির ব্যবসায়ী অমরকুমার দাস এবং তাঁর ব্যবসায়ী বন্ধু সুদীপ অধিকারী।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে অমর একটি ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ প্রাইভেট কার কিনেছিলেন। সে দিনই গাড়ির মালিকানাও তিনি নিজের নামে করিয়েছিলেন। রায়গঞ্জ আরটিও অফিসে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা। সব কিছু ঠিক চলছিল। গাড়িও ছুটছিল। কিন্তু সমস্যা সামনে হল কয়েক দিন আগে।
সম্প্রতি নতুন একটি গাড়ি কিনেছেন অমর। আগের সুদীপ অধিকারী নামে এক বন্ধুকে ব্যবহার করতে দেন। কথা হয়, ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় পরে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করে নেবেন তাঁরা। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে অমরের আগে কেনা গাড়িটির বিমা ‘ফেল’ হয়ে যায়। সুদীপ তখন তাঁদের আর এক বন্ধু কৌশিক রায়কে বিমা করার জন্য বলেছিলেন। ঝামেলার সেই শুরু। সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির মালিকানা আর অমরের নেই। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ওই গাড়ির মালিক এখন কোচবিহার জেলার বাসিন্দা জনৈক শুভঙ্কর দাস!
কী ভাবে এটা সম্ভব? খোঁজ নিয়ে অমর জানতে পারেন, তাঁর গাড়ির মালিকানা মাথাভাঙার আরটিও অফিস থেকে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সেখানকার আধিকারিকের সঙ্গে। তিনি সব শুনে জানান, শুভঙ্করের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়া হবে। কিন্তু গাড়ির নাম পরিবর্তন হয়ে গেলেই কি সমস্যা মিটবে? চোরাই গাড়ির এই চক্রকে ধরতে কী করছেন আধিকারিকরা? এমন সব প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
এ নিয়ে পুরনো গাড়ি কেনাবেচা করার ব্যবসায়ী কৌশিক রায়ের কথায়, ‘‘এটা বিরাট বড় একটি চক্র। অনেক বড় বড় মাথারা আছে। ওই চক্রের পর্দা ফাঁস না হলে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়তেই থাকবেন।’’
এই বিষয়ে রায়গঞ্জ আরটিও অফিসের আরটিও পালদেন ডি ভুটিয়া কম্পিউটার ঘেঁটে বলছেন, ‘‘ওই গাড়ির নাম পরিবর্তন করিয়েছে মাথাভাঙার আরটিও। সুতরাং তাঁরাই এর জবাব দেবেন।’’ তবে তিনিও সন্দেহ করছেন, এতে বড় কোনও চক্র জড়িত আছে। এ নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানাচ্ছেন অমরও।