ফাইল চিত্র।
ছ’শো পঁচাত্তর কিলোমিটার জাতীয় সড়ক। বরাদ্দ পঁচিশ হাজার কোটি টাকা। বিশেষ গুরুত্ব কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছনোর জাতীয় সড়কের উন্নতিকরণ। সোমবার পেশ হওয়া কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের জাতীয় সড়ক নিয়ে এই ছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে কলকাতার সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, এই উন্নতিকরণের কাজ শুরু হয়েছে বছর দেড়েক আগে। জমি জট থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের অভিযোগ এই রাস্তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। রাস্তার কাজ শেষ করতে যাতে নতুন করে বরাদ্দ বাড়ানো হয়, সে জন্য অনেক আগেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এ দিনের বাজেট ঘোষণায় সেই বরাদ্দ বৃদ্ধি রয়েছে বলে দাবি। সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিকের কথায়, “যত দূর শুনেছি নতুন কোনও ঘোষণা হয়নি। রাস্তার যে উন্নতিকরণের কাজ চলছিল, তাতেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ বাকি, সেখানে হয়তো ক্ষতিপূরণের হার বাড়তে পারে, সে সব কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত।”
কেন্দ্রীয় বাজেটে এই ঘোষণার পরপরই শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসব উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা তো রাস্তা করে দিয়েছি। এশিয়ান হাইওয়ে হয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট করিডর হচ্ছে ৩২০০ কোটি টাকা খরচ করে। ইসলামপুরের দিকে রাস্তার সমস্যা ছিল। মিটেছে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাস্তা তো আমরা করছি আরেকটা। পাশকুড়া থেকে হুগলি, বর্ধমান হয়ে শিলিগুড়ি অবধি।’’
কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যেতে গেলে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এই সড়ককে চার লেনে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এর মধ্যে মালদহের সুজাপুর ও নওদা যদুপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ জমি জটে আটকে। মালদহ শহরের মধ্যে দিয়ে ইংরেজবাজারের সুস্থানি মোড় থেকে পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি ৯ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। একসময়ে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাস্তার উন্নতিকরণের কাজ শুরু হলেও অর্থের অভাবে তা ঢিমেতালে চলছিল বলে দাবি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় সড়কের আরও কিছু অংশের কাজ হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, বাকি অংশ বরাদ্দ করা হবে পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজে। শিলিগুড়ির ঘোষপুকুর থেকে ধূপগুড়ি পর্যন্ত এই অংশের কাজ প্রায় শেষ। তবে ময়নাগুড়িতে উড়ালপুলের কাজ জমি জটে আটকে ছিল দীর্ঘদিন। এই অংশের কাজের জন্য সড়ক কর্তৃপক্ষকে নতুন করে টেন্ডার করতে হবে বলে দাবি। ফালাকাটা থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত অংশের টেন্ডার হয়ে থাকলেও কাজ শুরু হয়নি। সেখানেও নতুন করে বরাদ্দ করতে হবে বলে দাবি। কেন্দ্রের বরাদ্দ ২৫ হাজার কোটি টাকা থেকেই এই কাজগুলি হবে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানাচ্ছে।
বাজেটের পরেই কৃতিত্ব দাবি করে আসরে নেমেছে বিজেপি। পাল্টা কটাক্ষ করছে তৃণমূলও। মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর কথায়, “বিজেপি সরকার যে উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামোর কথা চিন্তা করে, সেটা সড়কে বরাদ্দতে ফের প্রমাণ হল।” জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ বলেন, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তো নতুন কোনও সড়কের কথা ঘোষণা করলেন না। পুরনো ভাঙাচোরা থমকে থাকা সড়কেই কুমিরছানার মতো তুলে দেখালেন।”