বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাথে বিশ্বনাথ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
২০০৬ সাল। রাজ্যে বাম-আমলের শেষের দিক। দলের তৎকালীন গড় দক্ষিণ দিনাজপুরেও কঠিন অবস্থা একদা-দাপুটে আরএসপি নেতা বিশ্বনাথ চৌধুরীর। বালুরঘাটে বামফ্রন্ট-মনোনীত প্রার্থী বিশ্বনাথের উল্টো দিকে বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী ও তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। ত্রিমুখী লড়াই বেগ দিচ্ছিল বিশ্বনাথকে। ভোটের আগে বালুরঘাট আসেন বুদ্ধদেব ভটাচার্য। বালুরঘাট হাই স্কুলের মাঠে সভা করেন বিশ্বনাথ চৌধুরীর সমর্থনে। মানুষজনকে জানান, দাপুটে নেতা বিশ্বনাথকে ফের মন্ত্রিসভায় চান তিনি। ব্যবধান কম হলেও জিতে যান বিশ্বনাথ।
২০০৬ সালের ৪ মে-র সেই প্রচারসভার কথা এখনও স্মৃতিতে উজ্জ্বল জেলার বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের। আরএসপি জেলা সম্পাদক তথা রাজ্যনেত্রী সুচেতা বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘সভামঞ্চে বিশ্বনাথদার হাত ধরে বুদ্ধদেববাবু বলেছিলেন— ‘এই লড়াকু, দাপুটে নেতাকেই আবার আমার ক্যাবিনেটে চাই’।’’ সিপিএম জেলা সম্পাদক নন্দলাল হাজরা সেই স্মৃতির কথাই জানিয়েছেন এ দিন। সে বার ভোটে অল্প ব্যবধানে হলেও জিতে যান বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী বুদ্ধদেবের প্রয়াণের দিন রাজনৈতিক লড়াইয়ের স্মৃতিতে ফিরতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। পাশাপাশি তাঁর পরিবারকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’
কয়েক দিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন বিশ্বনাথ চৌধুরী। বুদ্ধদেব-বিশ্বনাথ সম্পর্ক বিষয়ে জনমানসে রয়েছে আরও বহু স্মৃতি। শোনা যায়, বিশ্বনাথের কারা ও সমাজকল্যাণ দফতর নিয়ে বুদ্ধদেবের সঙ্গে নাকি নানা সময় মতান্তর হয়েছে। আবার, সংস্কৃতিমনষ্ক বুদ্ধদেবের উৎসাহেই নাটকের জেলার মানুষ বিশ্বনাথ সংশোধনাগারে নাট্যচর্চা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের প্রয়াণে বালুরঘাটের রাজনৈতিক মহল শোকস্তব্ধ। বৃহস্পতিবার জেলায় সিপিএমের সমস্ত দলীয় কার্যালয়ে পতাকা অর্ধনমিত ছিল। শোকবার্তা পাঠান রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। শোক জ্ঞাপন করেন জেলার নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র।