পোড়া ঘরেই পুজোর আয়োজন করছে কার্শিয়াং। নিজস্ব চিত্র।
বাঙালি আছে, আছে বাঙালির দুর্গাপুজোও, কিন্তু তার জন্য কোনও স্থায়ী ‘হল’ নেই। প্রায় নব্বই বছর আগে এই ভাবনা থেকে রাজরাজেশ্বরী হল তৈরির কাজ শুরু। তৈরি করিয়েছিলেন রায়বাহাদুর শশীভূষণ দে। হলটির নামকরণ হয় তাঁরই স্ত্রীর নামে। এবং সেই ১৯৩০ সাল থেকে কার্শিয়াঙের এই হলটিতেই হয়ে আসছে দুর্গাপুজো।
কিন্তু এ বছর আর সেখানে ঢাকের বাদ্যি বাজবে না। গত ২৪ ঘণ্টার তাণ্ডবে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে হলটি। আর তাতেই ভেঙে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের অনেক বাঙালি। কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বছরই এই হলে ধুমধাম করে শতবর্ষ হল কার্শিয়াং বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজোর। সংস্কারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী গত বছরই ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। ঠিক হয়, এর পরে দুর্গাপুজোর সঙ্গে কালীপুজোও হবে এই হলে।
এই হলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতি জগতের অনেকের স্মৃতি। বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে কখনও এসেছেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, কখনও দিলীপকুমার রায়। কখনও শোনা গিয়েছে অতুলপ্রসাদ সেন, শচীনদেব বর্মণ থেকে সলিল চৌধুরী, নির্মলেন্দু চৌধুরীর গান, কখনও সরোদ বাজিয়েছেন রাধিকামোহন মৈত্র।
রাজরাজেশ্বরী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, আটাত্তর বছর বয়সী অলকা দে বলছিলেন, ‘‘এটা তো সন্তান হারানোর মতো যন্ত্রণা।’’ বলছিলেন ছোটবেলার স্মৃতির কথা। বলছিলেন, সেই পাঁচ বছর বয়সে প্রথমবার এই হলের অনুষ্ঠানে আসেন। তার পর থেকে যেন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে হলটি। স্থানীয়দের মধ্যেও অনেকে মানতে পারছিলেন না রাজরাজেশ্বরীর উপরে হামলার বিষয়টি। তাঁরা বলছেন, এটা তো কোনও সরকারি দফতর নয়। তা হলে কেন হামলা?
একই ভাবে আক্রান্ত কার্শিয়াং টুরিস্ট লজও। রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর মতো এই লজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুশি মোদীর স্মৃতিও। এই লজের রান্নাঘর, স্টোররুম এবং জেনারেটর রুমও গত ২৪ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গিয়েছে। পাহাড়ের আন্দোলন থামলেও আবার কবে ট্যুরিস্ট লজটি স্বাভাবিক হবে তাতে প্রশ্নচিহ্ন পড়েই গেল।