সুশান্ত রায়ের গাড়ির নীলবাতি খুলে নিল পরিবহন দফতর। — ফাইল চিত্র।
প্রথমে গাড়ি থেকে নীলবাতি খুলে নিল পরিবহণ দফতর। পরের দিনই জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁর দেহরক্ষীও তুলে নেওয়া হল। আপাতত জোড়া ঘটনায় চাঞ্চল্য পড়েছে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে।
গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য দফতরের ওএসডি সুশান্ত রায়ের গাড়ির নীলবাতি খোলা ও দেহরক্ষী তুলে নেওয়ার জন্য জেলা পরিবহণ দফতর ও প্রশাসনের কাছে নির্দেশ আসে। জানা গিয়েছে, ওই নির্দেশ আসার পরে আবার তা তুলে নেওয়াও হয়েছিল। দিন তিনেক আগে ফের এই নির্দেশ পাঠিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। সেই মতো গত সোমবার জেলা পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে ওএসডি’র অফিসে গিয়ে নীলবাতি খুলে ফেলতে বলেন। এর পরেই গাড়ি থেকে নীলবাতি খুলে দেওয়া হয়েছে। পরের দিন তোলা হয়েছে দেহরক্ষীও।
জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনেই দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ জেলা পরিবহণ আধিকারিক নবীনচন্দ্র অধিকারীও বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে নিয়ম অনুযায়ী নীলবাতি খোলা হয়েছে।’’
কেন এই পদক্ষেপ? জেলা প্রশাসন সূত্রের অবশ্য খবর, নিয়ম অনুযায়ী ওএসডি নীলবাতি ব্যবহার করতে পারেন না। তবে প্রশাসনেরই অন্য এক সূত্র জানাচ্ছে, ওএসডি সুশান্ত তাঁর স্ত্রীর গাড়িটিই তাঁর দফতরের কাজে ব্যবহার করতেন। সেই গাড়িতেই গত কয়েক বছর ধরেই নীলবাতি ব্যবহার করতেন তিনি। এখন উত্তরবঙ্গে রয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। বুধবার বিকেলে তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ওএসডি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এখন আমায় বেশির ভাগ দিন কলকাতায় থাকতে হয়। তাই দেহরক্ষীকে আটকে রেখে লাভ কী? ছেড়ে দিলে তিনি অন্য কাজ করতে পারবেন। পুলিশের অনেক কাজ থাকে। সরকারের ‘ম্যান পাওয়ার’ নষ্ট হবে কেন! কাউন্সিলের ৭২ হাজার চিকিৎসকদের প্রতিনিধি হওয়ায় এখন কাজের জায়গা অনেক বেড়ে গিয়েছে। একই কারণে গাড়ির নীল বাতি খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনও ব্যাপার নেই। এ নিয়ে কে কী ভাবে ভাবছেন, তা জানা নেই।’’
ওএসডি সুশান্তের বিরুদ্ধে নানা সময় নানা অভিযোগ তুলেছে বিরোধী চিকিৎসক সংগঠন এবং বিভিন্ন মহল। অভিযোগ, জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের চোখের চিকিৎসক সুশান্তকে অবসর নেওয়ার পরেও পুনরায় চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁকে উত্তরবঙ্গের করোনা মোকাবিলায় ওএসডি হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। পরে তাঁকে উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্যের ওএসডি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেডিক্যাল কলেজে নিজের ছেলের পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ। তাঁর নির্দেশে চিকিৎসকদের বদলি, করোনার সময় নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার ইডি-কে তাঁর নামে বিস্তারিত দুর্নীতির এবং অনিয়মের অভিযোগ জানান। বিরোধী চিকিৎসক সংগঠন অভিযোগ তুলেছিল, মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনে সরকারি পদকে ব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়েছিলেন সুশান্ত।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘বারবার সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ জানিয়েছি। অবশেষে প্রশাসনের টনক নড়েছে মনে হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’’