—নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে শিক্ষিত বলতে কেউই নেই। স্কুলে শিক্ষকরা যখন ক্লাসে পড়াতেন তখন মোবাইলে সেই পাঠদান রেকর্ডিং করে রাখত সে। পরে বাড়িতে মোবাইল চালিয়ে সেই পড়া শুনে শুনেই মুখস্থ করত। আর বাকি পড়া ব্রেইল পদ্ধতির বই দিয়ে করত। এ ভাবেই পড়াশুনো করে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬২ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মালদহের সাট্টারি হাই স্কুলের অন্ধ ছাত্রী পবিত্রা ঘোষ। পেয়েছে ৪৩১ নম্বর। তাঁর স্বপ্ন বড় হয়ে শিক্ষিকা হওয়ার। কিন্তু ঘরেতে এমনই অভাব যে, লেখাপড়ার খরচ কী ভাবে জুটবে, সেই প্রশ্নই এখন তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। স্কুল অবশ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।
ইংরেজবাজার ব্লকের সাট্টারির নাগরপাড়া গ্রামে বাড়ি পবিত্রার। তাঁর বাবা নির্মল ঘোষ বৃদ্ধ। কাজ করতে পারেন না। মা অনেক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। এক ভাই রয়েছে। সে নালাগোলায় দাদুর বাড়িতে থাকে। এ দিকে, পরে পবিত্রার বাবা আরও একটি বিয়ে করেছেন এবং সেই পক্ষে তিন ভাই তাঁর রয়েছে। কিন্তু সংসার সামাল দিতে এই মা তিন ছেলেকে নিয়ে কাজের জন্য দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন। সেখান থেকে সংসারের খরচ সামান্য পাঠান তিনি। এ দিকে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘তিন মাস বয়স থেকেই মেয়ে অন্ধ। পবিত্রা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মালদহের একটি ব্লাইন্ড স্কুলে পড়ত, নবম শ্রেণিতে এই সাট্টারি স্কুলে ভর্তি হয়। প্রতিবেশী এক ছাত্রীর হাত ধরে পবিত্রা স্কুলে যেত।’’
পবিত্রা বলে, ‘‘বাবা লেখাপড়া জানেন না। ফলে বাড়িতে পড়ানোরও কেউ নেই। প্রাইভেট পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই. ব্লাইন্ড স্কুলে পড়ার সময় ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়া শিখেছিলাম। এই স্কুল ব্রেইল পদ্ধতির বই কিনে দিয়েছিল এবং সেই বই পড়তাম। মোবাইলে শিক্ষকদের পড়া রেকর্ড করতাম। সেগুলোই শুনতাম।’’
কিন্তু অঙ্কে এমন ভাবে পড়া তৈরি করা শক্ত। অঙ্কে সে কমও পেয়েছে। এ বার এই স্কুলেই সে কলা বিভাগ নিয়ে ভর্তি হতে চায় এবং বড় হয়ে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, পড়াশোনা চালানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁর পরিবারের নেই।