কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের এলাকাতে দলের সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিজেপির নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ। নিশীথের বাড়ি কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে। ওই এলাকার একাংশ দিনহাটা ও আর একটি অংশ সিতাই বিধানসভার মধ্যে পড়েছে। দু’টি বিধানসভাই তৃণমূলের দখলে। দাপুটে দুই তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ ও জগদীশ বসুনিয়া ওই দুই এলাকার বিধায়ক। আর তাই এই দুই এলাকায় যে কোনও কর্মসূচি করতে কেন্দ্রের শাসক দলকে বেগ পেতে হয় বলে ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন দলের নিচুতলার একাংশ। পাশাপাশি, তাঁরা অবশ্য এটাও বলছেন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী যদি নিজের এলাকায় একটু সময় দেন, তা হলে সংগঠন দ্রুত শক্তিশালী হবে।
নিশীথ প্রামাণিককে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জানান, তিনি বৈঠকে ব্যস্ত। তবে বিজেপির কোচবিহার জেলার সভাপতি সুকুমার রায় অবশ্য বলেন, “নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তাঁর নানা কর্মসূচি থাকে। তাই তিনি সব সময়ে জেলায় থাকতে পারেন না। তার ফাঁকেই প্রচারে সময় দেন।”
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে নিশীথ দিন কয়েক দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচির বেশ কিছু এলাকায় প্রচার শুরু করেন। দিন কয়েক যেতে না যেতেই অবশ্য প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে, সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সে কথা মাথায় রেখে দিনহাটায় শুরু হয়েছে বিজেপির ‘বুথ-প্রবাস’। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রথম দিনহাটাতেই ‘বুথ-প্রবাস’ শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, ভোটের আগে বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক নেতা ওই এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ করবেন।
এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে সিতাই এলাকায় জয়ী হন জগদীশ। বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটায় সামান্য ভোটের ব্যবধানে উদয়নকে হারিয়ে দিয়েছিলেন নিশীথ। পরে, উপনির্বাচনে ওই এলাকা থেকে রেকর্ড ভোটে জয়ী হন উদয়ন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, তার পর থেকে জেলার ওই দুই বিধানসভায় বিজেপির সংগঠন ‘দুর্বল’ হতে শুরু করে। বিজেপির একাধিক নেতা রাজ্যের শাসক দলে যোগ দেন। জেলার একাধিক বিধানসভায় বিজেপি নেতা-বিধায়কদের নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু ওই দুই বিধানসভায় সে ভাবে প্রচারে কাউকে দেখা যায় না। কিছু দিন আগে সিতাই ও দিনহাটায় জনসংযোগে যান নিশীথ। সিতাইয়ে তাঁর কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে তৃণমূলের দাবি ছিল, প্রচারে আসতে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনহাটার এক বিজেপি নেতা বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী যদি নিয়মিত এলাকায় প্রচারে বেরোন, তা হলে সংগঠন শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কিন্তু তাঁকে সে ভাবে পাওয়া যায়নি।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন দিনহাটার জীবেশ সাহা। দিনহাটার প্রচুর বুথে তিনি ‘প্রবাস’ করেছেন। বেশ কিছু বুথে তাঁকে তৃণমূলের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলেও অভিযোগ। তিনি অবশ্য বলেন, “এখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখছেন। সব জায়গায় আমাদের কর্মীরাও সক্রিয় হয়ে উঠছেন।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের মন্তব্য, ‘‘এই এলাকায় বিজেপির কোনও সংগঠনই নেই। নতুন করে তা হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তাদের চরিত্র মানুষ বুঝে গিয়েছেন।’’