—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমে একের পরে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে এ বার কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলল বিজেপি। কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশের অভিযোগের পরে, পাল্টা কংগ্রেসকে তোপ দেগেছে তারা৷ বৃহস্পতিবার বিজেপির অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র তথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা সিকিমের বর্তমান ভৌগোলিক পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে দায়ী করেছেন।
সাংসদ বলেন, ‘‘জয়রাম রমেশের মতো ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা করেই বলছি, ওঁর তো বটেই, কংগ্রেস দলের ক্ষমা চাওয়া উচিত। কংগ্রেস সরকারের আমলে এই সমস্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি অনুমোদন, পরিবেশের ছাড়পত্র পেয়েছিল।’’ সাংসদের দাবি, জয়রাম রমেশ দুই দফায় পরিবেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। তার পরেও তিনি সে সব ‘ভুলে গেলেন’ কী করে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
দু’দিন আগেই জয়রাম রমেশ সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের তিস্তার জলস্ফীতিকে ঘিরে বিপর্যয় নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন। তিস্তার জলস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের কালিম্পঙের সঙ্গে কেন্দ্র বঞ্চনা করেছে বলে অভিযোগ করেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (কমিউনিকেশন) তথা সাংসদ জয়রাম রমেশ নিজের এক্স হ্যান্ডলে তা তুলে ধরেন। কংগ্রেসের তরফেও একই দাবি করা হয়।
কংগ্রেসের তরফে দাবি, গত অক্টোবরে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের পাড় ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে সিকিমের সঙ্গে কালিম্পং জেলারও ক্ষতি হয়। অথচ, বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে সিকিমকে টাকা দেওয়ার কথা বললেও, পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ করেননি। সিকিমের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কও অবশ্য কিছু বলা হয়নি। সেই সঙ্গে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে বারবার ধস, তিস্তা ৫ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ধসের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, পর-পর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পাহাড় খুঁড়ে সেবক-রংপো রেলপথ তৈরির জেরে এলাকার ভৌগোলিক পরিস্থিতি বদল হয়েছে। পরিবেশের বিরাট ক্ষতি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
সেখানে জানানো হয়, তিস্তার এই জ়োনকে ধরে ন’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চলছে। ১৫টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে। আরও ২৮টি প্রকল্পের কাজ হওয়ার কথা রয়েছে। বিজেপি সাংসদের দাবি, ইউপিএ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকাকালীন এই অঞ্চলে প্রকল্প করলেও, সে সবে স্থানীয়দের কর্ম সংস্থান, সুলভে বিদ্যুৎ বা আর্থিক লাভের প্রসঙ্গ উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে। উল্টে, এই এলাকার ভৌগোলিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও কংগ্রেসের তরফে বিজেপির দাবি নিয়ে রাত অবধি কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। সম্প্রতি পাহাড় থেকে অজয় এডওয়ার্ড, মুনীশ তামাংরা দিল্লিতে গিয়ে জয়রাম রমেশকে তিস্তা, ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পরিস্থিতির কথা জানান। তার পরেই কংগ্রেস এবং জয়রামের তরফে নানা অভিযোগ তোলা হয়।
সরকারি হিসাবে, ২০২০ সালের জুন মাস অবধি সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে তিস্তা নদীর উপরে ৪৭টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। ২০০৪ সালে সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি অব ইন্ডিয়া ১৬২টি নতুন প্রকল্পের কথা বলে। সেখান থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে বলে জানানো হয়। সিকিমে তার মধ্যে ১০টি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। তা থেকে ১,৪৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে গত অক্টোবর মাসে প্রথম ডিকচুতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ ভাঙে। দু’দিন আগে ধসে সিংতামের বালুটারে তিস্তা-৫ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবনের একাংশ পাহাড় ধসে গুঁড়িয়ে যায়। তাতে তিস্তায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।