নগেন্দ্রনাথ রায় ওরফে অনন্ত রায়। — ফাইল ছবি।
এক ব্যক্তিকে সপাটে চড় মারছেন রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ তথা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতা অনন্ত রায়! এই ভিডিয়োই বর্তমানে ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। যদিও এ বিষয়ে সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। নিগৃহীত ব্যক্তিকে দলের লোক বলে দাবি করে অনন্ত বলেন, ‘‘কাজ পারেনি তাই শাসন করেছি।’’
শুক্রবার, কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত তিন বিঘা এবং চ্যাংরাবান্দা এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন অনন্ত। তিন বিঘায় কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর সাংসদকে নিজেদের এলাকায় নিয়ে যাওয়ার আব্দার করেন কয়েক জন অনন্ত অনুগামী। তাতে রাজিও হয়ে যান অনন্ত। কিন্তু অনুগামীদের দেখানো পথে সাংসদের গাড়ি ছুটতেই শুরু হয় বিপত্তি। একটি সংকীর্ণ রাস্তায় আটকে পড়ে তাঁর গাড়ি। রাস্তা এতটাই সংকীর্ণ যে গাড়ি ঘোরানোর মতো জায়গাও ছিল না। মাঝপথে এ ভাবে আটকে পড়ে মেজাজ হারান সাংসদ। গাড়ি থেকে নেমে সপাটে চড় বসান এক ব্যক্তির গালে। সেই ভিডিয়োই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সাংসদ এক ব্যক্তিকে চড়-থাপ্পর মারছেন। যদিও যে কর্মীকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে সাংসদকে, তিনি অবশ্য এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। থানায় এ বিষয়ে কোনও অভিযোগও জমা পড়েনি। আনন্দবাজার অনলাইন ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে অনন্তকে সে দিনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সরাসরি মারধরের কথা স্বীকার না করলেও তিনি যে কর্মীকে শাসন করেছেন, তা একাধিক বার জানিয়ে দেন গ্রেটারের এই শীর্ষ নেতা। অনন্ত বলেন, ‘‘আমার একটা প্রোটোকল আছে। আমি জানতাম না ওই এলাকায় আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম, ভেরি ডেঞ্জার! গাড়ি ঢুকেছে কিন্তু বেরনোর রাস্তা নেই। তা দেখে আমি টেনশনে পড়ে যাই। তার পর আমি ওঁকে বললাম, তোমাকে তো আমি এটা বলিনি। তুমি আমাকে এখানে ফাঁসালে কেন? ও ঠিকমতো জবাব দিতে পারছে না। তাই একটু শাসন করেছি।’’
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের একটি অংশের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে অনন্তের। আসল নাম নগেন্দ্রনাথ রায় হলেও অনন্ত মহারাজ নামে তিনি সমধিক পরিচিত। সম্প্রতি বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছে। এই অবস্থায় বিজেপি সাংসদের মারধরের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে মুখ খুলেছে তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধীরা। তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এটা গণতান্ত্রিক দেশ। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। একজন সাংসদ হয়ে এ কাজ তিনি কী ভাবে করলেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এই ঔদ্ধত্য মানুষ মেনে নেবে না। স্বৈরাচারী মানসিকতা থাকলেই এই ধরনের কাণ্ড ঘটানো যায়। আমরা ধিক্কার জানাই। মানুষই এর প্রতিবাদ করবে।’’ যদিও অনন্তের দাবি, অনুগামীকে যে কাজ করতে বলেছিলেন তা না করায় তিনি শাসন করেছেন মাত্র। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি নিগৃহীত ব্যক্তিও।