প্রতীকী চিত্র।
বঙ্গভঙ্গের কথা তুলেছিলেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা। তার পরে উত্তরবঙ্গের একটি অংশের বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের মুখে বেশ কয়েক বার উঠে এয়েছে এই প্রসঙ্গ। শনিবার কোচবিহারের শীতলখুচির বিজেপি বিধায়ক বরেনচন্দ্র বর্মণ নতুন করে বিষয়টি উস্কে দিলেন। তিনি এ দিন ফের অভিযোগ তোলেন, উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এর থেকে ‘পরিত্রাণের’ দাবিও তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষের দাবির কথা বলছি।’’ যদিও বিজেপির জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব দ্রুত তাঁর এই মন্তব্য থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চান, কিন্তু তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, গেরুয়া শিবির এই ভাবে বিষয়টি সামনে রাখার কৌশল নিয়েছে।
বরেন এ দিন দাবি করেন, “উত্তরবঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। কলকাতায় ছুটতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন হয়নি। মানুষ বঞ্চনার হাত থেকে পরিত্রাণ চাইছে।” বিধায়কের ওই বক্তব্যেই কৌশলে বিভাজনের রাজনীতির চেষ্টা দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের দাবি, গত এক দশকে কোচবিহার জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মতো বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছে। বহু সেতু হয়েছে। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন, শিল্পের প্রসারেও কাজ হয়েছে। তার পরেও নানা সময় গেরুয়া শিবিরের নেতারা পৃথক রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কথা কৌশলে তুলে ধরে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “বিজেপি নেতারা দ্বিচারিতা করছেন। কেউ বলছেন বাংলা ভাগ চাই না। আবার কাউকে দিয়ে কৌশলে বাংলা ভাগে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলানো হচ্ছে। সবটাই পরিকল্পিত ভাবে অশান্তি তৈরির চেষ্টা। না হলে ওরা উস্কানিমূলক মন্তব্য করা নেতাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না!”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বল আবার তৃণমূলের কোর্টে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার দাবি উঠছে কেন, সে প্রশ্ন করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। উত্তরবঙ্গের প্রতি রাজ্য সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ, উন্নাসিক মনোভাব এবং বিরোধী দলের প্রতি অত্যাচার— এই সব কারণেই আলাদা হওয়ার দাবি ওঠে।’’ একই সঙ্গে অবশ্য তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি এই দাবির সঙ্গে সহমত নয়।’’ ঠিক সেই সুরেই বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “দল বাংলা ভাগ চায় না। দলের রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ওই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”
তৃণমূলকে আক্রমণ করে নিখিলরঞ্জনের পাল্টা দাবি, “তৃণমূলই দ্বিচারিতা করে। সেটা পিএসি’র চেয়ারম্যান করার ঘটনাতেই স্পষ্ট।” তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর দিশাহারা বিজেপি নানা ভাবে রাজ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। এ সব তারই অঙ্গ। তবে তাতে লাভ হবে না।’’