কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের পদত্যাগের দাবির আন্দোলন নিয়ে কোচবিহারে পঞ্চায়েতের বৈতরণী পার করতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। পরেশ অধিকারীর ‘দুর্নীতি’ নিয়ে জেলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে শাসক দল। তারা মনে করছে, সোনার দোকানে চুরির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া নিয়ে নিশীথকে আক্রমণ করে সে অবস্থা অনেকটা পাল্টে দেওয়া সম্ভব। যদিও বিজেপি মনে করছে, দু’টি বিষয় পুরোপুরি আলাদা। নিশীথকে নিয়ে অভিযোগের প্রশ্নে বেশি দূর এগোতে পারবে না তৃণমূল। সব মিলিয়ে হাওয়া গরম হতে শুরু করেছে কোচবিহারে। নিশীথের বিরুদ্ধে সাঁটানো তৃণমূলের একাধিক পোস্টার রাতে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্ৰতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা মানুষের জানা প্রয়োজন। ওই ঘটনা আমাদের জেলার লজ্জা। তাই আমরা প্রচার করছি।’’ তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভাল ফল করার কোনও সুযোগ নেই। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি মানুষের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা লুকিয়ে রাখতে চায় বলেই তৃণমূলের টাঙানো পোস্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, তৃণমূলই পোস্টার টাঙিয়েছে, তারাই আবার ছিঁড়েছে। বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিদিন দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। মানুষ সুযোগ পেলেই তৃণমূলকে সরিয়ে দেবে। তা বুঝতে পেরেই কিছু বিষয় নিয়ে হইচই করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে ওরা।’’
বিজেপির দাবি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে নিশীথের মামলার তুলনা হয় না। অভিযোগ, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিজের মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন পরেশ। আদালতের রায়ে পরেশের মেয়ের চাকরি গিয়েছে। বেতনের টাকাও ফেরত দিতে হয়েছে। পরেশের বিরুদ্ধে ইডি ও সিবিআই তদন্ত করছে। সেখানে নিশীথের বিরুদ্ধে চুরির দোকানে চুরির মামলা রয়েছে। তা আদালতে প্রমাণিত হয়নি। তিনি সময় মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সে বিচারেই দু’টি বিষয় আলাদা বলেই দাবি বিজেপির।
তৃণমূলের পাল্টা দাবি, নিশীথের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালতে হাজির না হয়ে তিনি প্রকাশ্যে যে ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন আছে। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, পরেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে, মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র নিশীথকে সরিয়ে দেবে কি না বা তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। বিজেপির কথায়, আদালত অভিযোগ প্রমাণিত না হলে ,পদত্যাগের প্রশ্ন আসতে পারে না। এই অবস্থায় দুইপক্ষের মধ্যে চাপান-উতোর তুঙ্গে উঠেছে।