উদয়ন গুহের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে মহিলারা ‘মধ্যরাত দখলের’ কর্মসূচি নিয়েছেন। কলকাতা থেকে সেই আহ্বান ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়। উত্তরবঙ্গেও এই অরাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে বিশাল সাড়া পড়েছে। তাই নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হল তোলপাড়। বিজেপি তাঁকে নারীবিদ্বেষী বলে দুষেছে।
শুক্রবার রাতে ফেসবুক পোস্টে উদয়ন লেখেন, ‘‘দিনহাটার কেউ কেউ কাল (বুধবার) রাতের দখল নিতে চাইছেন। আমার সমর্থন থাকল।’’ তার পরেই মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘তবে স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে রাতে ফোন করবেন না।’’ উদয়নের এই পোস্টের বিরোধিতায় ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে রাজ্যের মন্ত্রীর পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে লেখা হয়, ‘‘নারীবিদ্বেষী পোস্ট তৃণমূলের মন্ত্রীর। আরজি করে ধর্ষণ এবং হত্যার ভয়াবহতার মধ্যে শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যখন আজ (বুধবার) রাতে রাস্তায় নেমে শঙ্খ বাজানোর পরিকল্পনা করছে তখন, উদয়ন গুহ অশ্লীল রসিকতা করেছেন!’’
বিজেপির এ-ও অভিযোগ, মন্ত্রী গার্হস্থ্য হিংসার মতো ঘটনাকে তুচ্ছ বলে মনে করেন। তাই রাতদুপুরে নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনও মহিলা যদি জনপ্রতিনিধি বলে উদয়নের সাহায্য চান, তাঁদের সরাসরি ‘না’ বলে দেবেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতের এই আন্দোলনকে ঘিরে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত শাসকদলের নেতারা। মহিলাদের উদ্যোগে হতে চলা এই কর্মসূচি নিয়ে দু’রকম সুর শোনা যাচ্ছে তাঁদের মুখে। মঙ্গলবার রাতে যেমন এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ঘোষণা করেছেন, বুধবারের কর্মসূচিতে তিনি যোগ দেবেন। তিনি লেখেন, “কালকে আমিও প্রতিবাদে যোগ দেব। কেন না লক্ষ লক্ষ বাঙালির মতো আমিও এক জন মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু।” সুখেন্দু আরও লেখেন, “আমাদের এ বিষয়ে সরব হতে হবে। মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসা অনেক হয়েছে। চলুন সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। যা-ই হোক না কেন।” আবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “মনে রাখুন, রাত মহিলাদের দখলেই থাকে বাংলায়। অসংখ্য মা, বোন বিভিন্ন পেশায় রাতভর কাজ করেন। অনেকে ভোররাত, মাঝরাতে কত দূর থেকে যাতায়াত করেন। বিচ্ছিন্ন খারাপ ঘটনা দিয়ে সার্বিক ভাবে বাংলাকে ছোট যারা করছে, তারা অরাজনীতির মোড়কে রাজনীতি করছে। ভোটে হারা অতৃপ্ত আত্মাগুলোর আবেগের অভিনয় চলছে। এদের মুখোশ নয়, মুখ দেখে বিচার করুন।”
অন্য দিকে, বিজেপির কটাক্ষ নিয়ে উদয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘আমি কোনও নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করিনি।’’