ক্ষোভ: জাতীয় সড়কের উপর দেহ রেখে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।
পুরনো রেষারেষির জেরে দুই ক্লাবের সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক যুবকের। বুধবার তুফানগঞ্জের নাককাটিগাছ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর গ্রামে এই ঘটনার জেরে শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির তুমুল চাপানউতোর। বিজেপির দাবি, মৃত কালাচাঁদ কর্মকার (৫৫) তাদের দলের নেতা। তিনি তুফানগঞ্জ বিধানসভার ১৯৮ বুথের বিজেপির সম্পাদক। তৃণমূলকে দায়ী করে এই মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জ মহকুমায় ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূলের নেতৃত্বের বক্তব্য, দু’টি ক্লাবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি চলছিল। এখানে কোনও রাজনীতির বিষয় নেই। তুফানগঞ্জ পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন হাসপাতাল থেকে মৃত যুবকের দেহ আসার পরে বিজেপি কর্মীরা বলরামপুর এলাকায় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে মৃতদেহ রেখে অবরোধ করে বিকেলে। অবরোধে উপস্থিত ছিলেন কোচবিহার জেলা বিজেপির সভাপতি মালতী রাভা, জেলা সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী প্রমুখ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাশাপাশি দু’টি ক্লাবের মধ্যে রেষারেষি অনেক দিনের। এ দিন সাতসকালে একটি ক্লাবের কয়েকজন সদস্য অতর্কিত হামলা চালায় অন্য ক্লাবের কালীপুজোর মণ্ডপে ঘুমন্ত দুই সদস্যের উপর। স্থানীয় বাসিন্দা বিক্রম কর্মকার বলেন, ‘‘আমার ভাই বিপ্লব এবং পরিমল বর্মণ মণ্ডপে ঘুমিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত কমল বর্মণ এবং তার দলবল আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। আজ সকালে অতর্কিত হামলা করায় গুরুতর জখম হয় ভাই বিপ্লব।’’ ঘটনাটি ঘটে কালাচাঁদ কর্মকারের দোকানের পাশেই। বিক্রমের বক্তব্য, কালাচাঁদ গন্ডগোল আটকাতে গেলে তাঁর উপরেও হামলা হয়। তাঁকে মাটিতে ফেলে মারা হয়। স্থানীয় লোকজন তুফানগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক কালাচাঁদকে মৃত বলে জানান। স্থানীয় অন্য এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুই ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে প্রবল কথা কাটাকাটি হয়। কালাচাঁদ এগিয়ে এসে তা থামানোর চেষ্টা করেন। দুই পক্ষের লোকজনই তাঁকে কিল-ঘুষি মারে। এর পর তিনি মাটিতে পড়ে যান।
এলাকার বিজেপির মণ্ডল সভাপতি প্রকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকা দখলের জন্য তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তিনজনের উপর আক্রমণ করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কালাচাঁদ কর্মকারের।’’ তৃণমূলের-১ ব্লক বি তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ বসাক বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে দুই ক্লাবের মধ্যে রেষারেষি ছিল। সব মৃত্যুই দুঃখজনক। বিজেপি পরিবেশ উত্তপ্ত করতে চাইছে। তৃণমূলে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।’’
বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারাও ওই ঘটনার জন্য তৃণমূলকে দুষেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় টুইট করে লিখেছেন, তুফানগঞ্জে তাঁদের দলের বুথ সম্পাদক কালাচাঁদ কর্মকারকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে তৃণমূলের গুন্ডারা। তৃণমূল দুষ্কৃতীদের হামলায় আহত দলের কর্মী পরিমল বর্মণ ও বিপ্লব কর্মকার আশঙ্কাজনক অবস্থায় তুফানগঞ্জের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে লিখেছেন, কোচবিহারে বিজেপির বুথ সম্পাদক কালাচাঁদ কর্মকারকে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী পিটিয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু প্রশাসন চোখে কাপড় বেঁধে রেখেছে কোনও পদক্ষেপ না করে। খুব শীঘ্রই মানুষ এর জবাব দেবে এই ‘অহঙ্কারী’ সরকারকে। দলের রাজ্য নেতা রথীন বসু টুইট করেন, রাজ্যে তৃণমূলের খুনের রাজনীতি চলছেই। তৃণমূলের গুন্ডারা তুফানগঞ্জে বিজেপির বুথ সম্পাদককে খুন করেছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ এই অত্যাচার আর মেনে নেবে না।
জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘দু’টি ক্লাবের ঝামেলার জন্য এমন ঘটনা হয়েছে। বিজেপি রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করছে।’’ বন্ধ নিয়ে পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘প্রশাসনের উপর আস্থা আছে। প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’’
এ দিন দুপুরে পুলিশকে ঘিরে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় তৎপর হয়ে ওঠেন তুফানগঞ্জ এবং জেলার বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিন কোচবিহারে সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা পুলিশ সুপার কে কন্নান বলেন শিকারপুর গ্রামে আগে একটি ক্লাব থাকলেও পরে বিভক্ত হয়ে দুটো হয়। গত বছরও তারা কালীপুজো করেছিল। আগে থেকে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা ছিল। তিনি জানান, রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। পুলিশকে জানিয়ে পুজো হয়েছিল। মঙ্গলবারও বিসর্জনের শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। এ দিনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত কমল বর্মণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। মালতি রাভার প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ সুপার কীভাবে বললেন রাজনীতির রং নেই? তৃণমূলের গুন্ডারা বিজেপি কর্মীদের খুন করছে। প্রতিবাদে আমরা তুফানগঞ্জ মহকুমায় ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছি বৃহস্পতিবার।’’