—প্রতীকী ছবি।
অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বিরুদ্ধে এত দিন অত্যাচারের অভিযোগ তুলতে দেখা যেত রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে। এ বার একই অভিযোগ তুলে সরব হল বিজেপিও। ঘটনাচক্রে, এই অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের জেলা কোচবিহারে। এই জেলার দিনহাটা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন নিশীথ। সেই কোচবিহারেই বিএসএফের ‘বাড়বাড়ন্ত’ নিয়ে সরব হয়ে পথ অবরোধ করেন বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা। যদিও এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএসএফের তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
দানের গরু নিয়ে যাওয়ার সময় বিএসএফ বাধা দিয়েছে বলে গত বুধবার অভিযোগ তুলেছিলেন মেখলিগঞ্জ সীমান্তের বাগডোকরা-ফুলকাডাবরী গ্রাম পঞ্চায়েতের চারুবাগান এলাকার বাসিন্দা দীপ্তি রায় ডাকুয়া। মহিলার দাবি, দানের গরুটির বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও অর্জুন ক্যাম্পের ৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের বিএসএফ জওয়ানেরা তা মানতে নারাজ ছিলেন। অভিযোগ, গরুটি পাচারের উদ্দেশেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এমন সন্দেহের বশে গরুটিকে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রাখে বিএসএফ। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান-সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের কটূক্তি করা, এমনকি গুলি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল।
দীপ্তি বলেন, ‘‘গতকাল গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বিএসএফ আমার পথ আটকায়। আমার সঙ্গে আমরা সন্তানও ছিল। বিএসএফের ধারণা হয়েছে, ওটা নাকি পাচারের গরু! গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া গরুর বৈধ কাগজ দেখানোর পরেও বিএসএফ তা মানতে চায়নি। আমাকে পাচারকারী সন্দেহে আটকে রাখে। এমনকি গুলি করারও হুমকি দেয়। এর পর বিষয়টি বিডিও এবং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে জানালে তারা বিএসএফ ক্যাম্পে এসে গরু এবং আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।’’ দীপ্তিকে হেনস্থার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে মেখলিগঞ্জ-ধাপরাগামী রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে কুচলিবাড়ি থানার পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনিমা রায় বলেন, ‘‘স্থানীয় এক মহিলা তাঁর দানের গরু নিয়ে আসার সময় বিএসএফ বাধা দেয়। গরুটিকে আটকেও রাখে। এই বিষয়টি মেখলিগঞ্জের বিডিওকে জানানো হয়। বিএসএফ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এক প্রকার হুমকি দিয়েছে। যদিও পরে গরুটিকে মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফ আমাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে। আমরা জনপ্রতিনিধি। আমাদের কথাও মানতে চায় না বিএসএফ। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেছেন। আমরাও তাতে শামিল হয়েছিলাম।’’
অনিমার স্বামী দয়াল রায় স্থানীয় বিজেপি নেতা। দয়াল বলেন, ‘‘আমরা বিজেপির প্রতিনিধি। তার পরেও বিএসএফ আমাদের কথা বিশ্বাস করে না। আমাদের হেনস্থা করার প্রতিবাদে স্থানীয় গ্রামবাসীরা আজ পথ অবরোধ করেছেন। এতে আমরাও সমর্থন জানিয়েছি। বিএসএফ কারও কথাই শুনতে চায় না। গতকাল এলাকার প্রধান, উপপ্রধানকে অপমান করেছেন বিএসএফ জওয়ানেরা। তারই প্রতিবাদে আজ এই পথ অবরোধ।’’ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মেখলিগঞ্জের বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে গোটা বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।’’