বার্লার সঙ্গে বৈঠক গুরুংয়ের।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ জন বার্লাকে পাশে বসিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবির প্রসঙ্গ ফের তুললেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। শুক্রবার গুরুং দিল্লি, হরিদ্বার থেকে রাজ্যে ফিরেই বানারহাটে বার্লার বাড়িতে যান। দুজনের বৈঠক ঘিরে পাহাড়, ডুয়ার্সের রাজনীতিতে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। গুরুং কি আবার বিজেপির কাছাকাছি আসছেন, সে প্রশ্নেও নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। দিল্লিতেও বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর সঙ্গে গুরুং দেখা করেন। তাঁকে আলাদা রাজ্যের দাবির প্রসঙ্গে জানান। স্বামী সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বাংলার মধ্যেই পাহাড়ের জন্য আলাদা স্বায়ত্ত শাসনের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
বাগডোগরা বিমানবন্দরে এ দিন নেমে সেখান থেকে সরাসরি বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে জন বার্লার বাড়িতে যান বিমল গুরুং। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে বিমল গুরুং বললেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি উত্তরবঙ্গের সমস্ত ভাষাভাষী জনজাতির মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পৃথক রাজ্যের দাবি আমাদের ছিল। এখনও আছে। যত দিন নিঃশ্বাস থাকবে, এই দাবি থাকবে।’’ তবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ষষ্ঠ তফসিল বা অন্য কী উপায়ে সে ‘স্বপ্ন পূরণ’ হবে তা খোলসা করে তিনি বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সবই সময় বলবে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার্লাও অনেকটা এই সুরেই কথা বলেন।
বার্লা জানান, ২০১৩ সালে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের হয়ে গুরুংকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েতে ২৩৫টি আসন জিতেছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পরেই বিমলকে তিনি আমন্ত্রণ করেছিলেন। এ বার হোলির আগেও বাড়িতে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেন। তাই গুরুং তাঁর বাড়িতে এসেছেন। রাজনৈতিক পথ আলাদা হলেও বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। গুরুং-এর সহায়তায় ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির টিকিট পেয়েছিলেন। গুরুংও বলেন, ‘‘২০০৭ থেকেই জন বার্লার সঙ্গে সম্পর্ক। জিটিএ ভোটের বিরোধিতায় অনশন চলাকালীনও জন দেখা করতে এসেছিল। আদিবাসী ও গোর্খাদের মিলিত লড়াইয়ের জন্য দু’জনে কাজ করছি।’’
তাঁর আমলেই পাহাড়ে উন্নয়ন হয়েছে বলে গুরুং এ দিন দাবি করেছেন। বলেছেন, ‘‘২০১২-২০১৭ সাল অবধি পাহাড়ের উন্নয়ন করেছি।’’ যদিও জিটিএ-র অডিট করার ঘোষণার পরেই পাহাড়ে আন্দোলন শুরু হয় বলে অভিযোগ। পরবর্তীতে ১০৪ দিনের পাহাড় বনধ, একাধিক জনের গুলিতে মৃত্যু, পুলিশ অফিসার খুনের পরে পাহাড় রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। দার্জিলিং ছেড়ে সাড়ে তিন বছর আত্মগোপন করেন গুরুং। তৃণমূলকে সমর্থন করে বিধানসভা ভোটের আগে পাহাড়ে ফেরেন। গত কয়েক বছরে শাসক দলের সব বিষয়ে সমর্থন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন গুরুং। জিটিএ ভোটের পর থেকে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে গুরুং-র।
গত বছরের শেষে দার্জিলিং পুরসভার হাত বদলের পরে বিনয় তামাং, অজয় এডওয়ার্ডদের নিয়ে নতুন করে আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল। দেশজুড়ে গোর্খাদের একটি কমিটি তৈরির কথা বলেন। বার্লার সঙ্গে গুরুংয়ের এ দিন তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।