অনীত থাপা। —ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতর ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি যা, তাতে বিষয়টি হাই কোর্টে গড়াতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শিক্ষা দফতরে চিঠি দেওয়ার কথা জানালেন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) প্রধান অনীত থাপা। শিক্ষা দফতরের নিয়োগ সংক্রান্ত বক্তব্য সংশোধন করা না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটার কথাও বলেছেন জিটিএ প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘স্বায়ত্তশাসন জিটিএ-র বিষয়। কেন্দ্র এবং রাজ্য সেই ক্ষমতা জিটিএ-কে দিয়েছে। শিক্ষা দফতর হস্তান্তরিত হয়েছে। প্রাইমারি স্কুল বোর্ড তৈরি হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আবেদন জমা পড়েছে। আইনত জিটিএ পরীক্ষা নিতে পারে। স্কুল শিক্ষা দফতর ঠিক তথ্য না দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’
সম্প্রতি পাহাড়ের এক বাসিন্দা ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা দফতরে তথ্য জানার অধিকারে চিঠি দেন। শিক্ষা দফতর জানায়, টেট পরীক্ষার কোনও এক্তিয়ার জিটিএ-র নেই। একে হাতিয়ার করে হামরো পার্টি প্রথম কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি তোলে। বুধবার সাংসদ রাজু বিস্তা সিবিআই এবং রাজ্যপালকে এ নিয়ে চিঠি দেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালকে একই বিষয় জানিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি তুলেছেন জিএনএলএফ নেতা তথা বিধায়ক নীরজ জিম্বা।
এ দিনই জিটিএ-র বিভিন্ন নথিপত্র দেখিয়ে জিটিএ প্রধান দাবি করেছেন, জিটিএ নিয়োগ নিয়ে কোনও ভুল করেনি এবং কোথাও কোনও বেআইনি কাজ হয়নি। অনীতের বক্তব্য, তথ্য জানার অধিকারের জবাবে এটা জানানো জরুরি ছিল যে, জিটিএ-তে শিক্ষা দফতর রয়েছে এবং তারাই বিষয়টি দেখবে। তা না করে রাজ্য শিক্ষা দফতর উল্টো জানিয়ে দিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। অনীত বলেন, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে মিলে কাজ করছি বলে আমাদের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কোনও আপোস করব না। আমাদের শিক্ষা দফতর। আমরা পরীক্ষা কেন নেব না? ভোট এবং জিটিএ মেয়াদ শেষের জন্য পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। সময়মতো অবশ্যই হবে।’’
গত বিধানসভা ভোটের আগে, ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, পাহাড়ের টেটের মতো স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের পরীক্ষা হয়। পাহাড়ের ৩২টি সেন্টারে ১৪,৫০০ জন আবেদনকারী পরীক্ষা দেন। পাহাড়়ের ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে প্রত্যেক আবেদনকারীকে ২৭০ টাকা করে জমা দিতে হয়। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বই বা বিদেশে কর্মসূত্রে থাকা ছেলেমেয়েরা পাহাড়ে ফিরে এসে পরীক্ষা দেন। গত বিধানসভা ভোটের আগে পরীক্ষা নেওয়া হলেও ফলপ্রকাশ হয়নি। এর পরে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড প্রথম অভিযোগ সামনে আনেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটে জেতার জন্যই এই ‘ভুয়ো’ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে রাজু বিস্তা সিবিআই তদন্ত চান।
এ দিন বিধায়ক নীরজ জিম্বা বলেছেন, ‘‘নতুন এই দুর্নীতি সামনে এসেছে পাহাড়ে। এর বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও ভিজ়িল্যান্স কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি।’’ এ বিষয়ে জিটিএ প্রধানের মন্তব্য, ‘‘জিটিএ আইন সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল। পড়াশোনা না করলে এমনই হয়!’’