উল্লাস: ইংরেজবাজারে পঞ্চায়েত ভোটের ফল বেরোতেই উল্লাসে মেতেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। ছবি: তথাগত সেন শর্মা
একদা কংগ্রেসের ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত উত্তর দিনাজপুরে আগেই প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল তৃণমূল। এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও ‘কর্তৃত্ব’ কায়েম করে তৃপ্তির হাসি তৃণমূল নেতাদের মুখে।
বৃহস্পতিবার গণনায় ধীরে ধীরে দেখা যারা অধিকাংশ ব্লকে তৃণমূলই এগিয়ে। তাতে জেলা পরিষদও যে এ বার তৃণমূল সরাসরি দখল করতে চলেছে সেই ইঙ্গিতই মিলছে বলে দলের জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদে ২৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ৫টি। বামেরা ১৩টি এবং কংগ্রেসের ৮টি আসন ছিল। পরে কংগ্রেস এবং সিপিএমের ১১ জন সদস্যদের দলে সামিল করে তৃণমূল জেলা পরিষদ পরবর্তীতে দখল করেছিল ২০১৪ সালে। এ বার সেই চিন্তা নেই বলেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে তাদের জয়ের ধারা দেখে মনে করছেন নেতৃত্ব। গত বার একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি ছিল তৃণমূলের দখলে। সেটি ইটাহার পঞ্চায়েত সমিতি। এ বার জেলার ৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে অধিকাংশই তারা নেবে বলে আশাবাদী।
যদিও জেলার কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, রায়গঞ্জ ব্লকে বিজেপি অনেক গ্রাম পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছে। তাতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কিছুটা চিন্তিত। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, যে ভাবে মনোনয়ন পর্ব থেকে বাধা দিয়ে আসছে শাসক দল এবং বোমাবাজি, গুলির রাজনীতি করে ভোট করিয়েছে তার পরেও এই ফলে তাঁরা আশার দেখছেন। তবে সার্বিক ভাবে তৃণমূলই এগিয়ে থাকায় বিজেপির এই উত্থানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তাঁদের জেলা নেতৃত্ব। অমলবাবু বলেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতে অধিকাংশ আসনেই আমরা জয়ী হয়েছি। ৮৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। জেলা পরিষদ আমরাই সরাসরি দখল করব। গত বার সেটা করা যায়নি। পরে আমরা সেখানে ক্ষমতায় এসেছিলাম।’’
দলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের বাড়ি যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সেখানে হেরেছে তৃণমূল। অমলবাবু ইটাহার ব্লকের ইটাহার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। যদিও তিনি সেখানকার ভোটার নয়। তিনি ভোটার পাশের গ্রাম পতিরাজপুরের।
তবে ইটাহার ব্লকে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতেই জিতেছে তৃণমূল। ইটাহার ব্লকটি আদিবাসী অধ্যুষিত। তাতে বিজেপি নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে বলে দাবি। মনোনয়ন পর্বে ইটাহার ব্লকে বিজেপির হয়ে তির ধনুক নিয়ে মনোননয়পত্র জমা করতে যাওয়া হয়। এ দিন চোপড়ায় বিজেপির এজেন্টদের গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। চোপড়ায় তৃণমূলেরই জয় হয়েছে। তবে জেলার সদর ব্লকে রাত সাতটা পর্যন্ত গণনার ফল যা ছিল, তার মধ্যে বিজেপি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে। দু’টিতে তৃণমূল এবং একটি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। কালিয়াগঞ্জে বিজেপি ভাল ফল করার পথে। সেখানে ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এগিয়েছিল বিজেপি। দুটিতে তৃণমূল। সেখানে কিছুটা খারাপ ফল হওয়ার কথা স্বীকার করেন অমলবাবু।
বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম বলেন, ‘‘পুরো ফল বার হলে আমরা আরও অনেক গ্রাম পঞ্চায়েতে জিতব বলেই মনে হচ্ছে।’’