মাঝরাতে হঠাৎ বুথ দখল, সকালে বাড়ি ভাঙচুর 

অভিযোগ, হঠাৎ বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোটের চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। সেই আতঙ্কে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে লাইন। 

Advertisement

দীপেন রায়

চ্যাংড়াবান্ধা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০২:২২
Share:

ক্ষতিগ্রস্ত: ভোটবাড়িতে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

রাত তখন প্রায় ১২টা। তখনও ভোটের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে তিনশোর বেশি মহিলা-পুরুষ। অভিযোগ, হঠাৎ বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোটের চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। সেই আতঙ্কে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে লাইন।

Advertisement

ভোটাররা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে শুরু করে দেন। ভোটকর্মীরা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন প্রাণের তাগিদে। খবর যায় কন্ট্রোল রুমে। আধঘণ্টা পর এসডিপিও অভিষেক রায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ভোটকর্মী ও বিরোধী দলের প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টদের নিরাপদে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ চলে যেতেই মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়িতে শাসক দলের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রহৃত হন বিরোধী কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের মধ্যে হেমন্ত বর্মন, আঞ্জুমা বেগম, হাফিজ মহম্মদ, জহির মহম্মদ ও ময়না বেগম গুরুতর জখম হন। আহতরা মেখলিগঞ্জ, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ একজন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে। রাতভর অশান্তির পর ভোরের আলো ফুটতেই গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক। ময়না বেগম ও জহির মহম্মদের বাড়ি রাতের অন্ধকারে ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ময়না বলেন, ‘‘আমি বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ আমাদের বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে দেয়। কোনওমতে পালিয়ে যাই। পরে পুলিশ আসায় ফিরে আসি। কিন্তু ভয় কাটছে না। রাতে আবার হামলা হতে পারে।’’ বেশ কয়েকজন বিরোধী কর্মী-সমর্থক বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর। শাসক দল অস্বীকার করেছে হিংসার অভিযোগ। তাদের দাবি, বিরোধী ফরওয়ার্ড ব্লকের পঞ্চায়েত সদস্যের লোকজন জিততে পারবে না জেনে অশান্তি বাধিয়েছে।

Advertisement

মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়ি অঞ্চল দীর্ঘ বাম শাসনের সময়েও কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। শাসক ও বিরোধী মিলেমিশে ভোট হত। এবারের ছবি অন্যরকম। এলাকার বাসিন্দা রফিকুল হক বলেন, ‘‘ভোটের থেকে জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ আবার ময়না বিবি বললেন, ‘‘আমি অনেকবার ভোট দিয়েছি। এরকম কোনওদিন দেখিনি। আমরা কোনওমতে বেঁচে পালিয়ে এসেছি। যা হয়েছে এখানেই শেষ। আর কোনওদিন ভোট দিতে যাব না।’’

ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি পরেশচন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘‘শাসক দল সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে জিততে মরিয়া। আমাদের কর্মীরা তা রুখে দেওয়ায় আমাদের কর্মীদের উপর চড়াও হয়। আমরা ভোটবাড়ির পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনারের কাছে তুলে ধরব।’’ মেখলিগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক লক্ষ্মীকান্ত সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা কোথাও কোনও অশান্তি করেনি। বরং ভোটবাড়িতে ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিরোধীরা মিলিত ভাবে ভোট বানচাল করার চেষ্টা করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement