সুকান্ত মজুমদার এবং উদয়ন গুহ। —ফাইল চিত্র।
দিনভর যুদ্ধ জারি উদয়ন গুহ বনাম সুকান্ত মজুমদারের। এ বার অবরোধ তুলে নিয়ে দিনহাটার বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ। বিধানসভায় রেকর্ড ভোটে জয়ী উদয়নের বুকের উপর দিয়ে গিয়ে তাঁকে পরের বার নির্বাচনে হারাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন সুকান্ত। দেখে নেওয়ারও বার্তা দিলেন। যার প্রত্যুত্তরে উদয়নের পাল্টা খোঁচা, ‘‘ওর তো আর মুখ চেপে রাখতে পারি না।’’
শুক্রবার দিনভর রাজনৈতিক চাপানউতর জারি রয়েছে কোচবিহারে। উদয়ন এবং সুকান্ত পরস্পরকে তীব্র ভাষায় নিশানা করেছেন। মন্ত্রী উদয়ন পুলিশি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন, ‘‘দিনহাটা থানার আইসি টাকার জন্য ভেটাগুড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতে অভিযান চালায় না।’’ তিনি এ-ও বলেন, গোটা মহকুমায় মাদক উদ্ধারের অভিযান চালানো হলেও ভেটাগুড়ি সেটা থেকে বঞ্চিত থাকে। তৃণমূল নেতা আবু মিয়াঁর খুনের মামলায় নিশীথের গ্রেফতারের দাবিতে দিনহাটা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান মন্ত্রী। তিনি চ্যালেঞ্জের সুরে বলেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান চালানো হলে যদি বেআইনি অস্ত্র এবং টাকা উদ্ধার না-হয় তা হলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। এর পাল্টা সুকান্ত বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এবং মন্ত্রী উদয়ন গুহের যদি দম থাকে তা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে গ্রেফতার করে দেখান।’’ এই সংঘাতের মধ্যে কোচবিহার থেকে দিনহাটা যাচ্ছিলেন সুকান্ত। কিন্তু কোচবিহারের মরাপোড়া চৌপতিতে পুলিশ তাঁর কনভয় আটকে দেয়। আহত দলীয় কর্মীর বাড়িতে যেতে না পেরে রাস্তায় বসে পড়েন সুকান্ত। স্লোগান ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ওই অবরোধ চলার পর পুলিশের অনুরোধেই সেখান থেকে উঠে পড়েন সুকান্ত ও তাঁর সঙ্গীরা। তখন আবার উদয়নকে নিশানা করেন তিনি। অভিযোগ, উদয়নের অঙ্গুলিহেলনেই পুলিশ কাজ করছে।
সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের পুলিশ-প্রশাসন অনুরোধ করেছে যে হেতু এটা কোচবিহারের একটি ব্যস্ততম রাস্তা, এখানে অবরোধ হওয়ার ফলে প্রচুর গাড়ি আটকে গেছে। আমরা তো আর তৃণমূল কংগ্রেস নই। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করি। তাদের কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা দূর করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। তাই তাদের যাতে অসুবিধা না-হয়, সে জন্য অবরোধ তুলে নিচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামিদিনে আমাদের আন্দোলন চলবে। আন্দোলন তো বন্ধ হবে না। উদয়ন গুহের মতো শক্তি যেন গণতন্ত্রকে নষ্ট করতে না পারে, সে লড়াই চলবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দাবি করেন, তাঁদের কেন পুলিশ আটকাল তার কোনও ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই। তবে তাঁর মনে হচ্ছে, আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যত সংখ্যক লোক জড়ো হয়েছিলেন, তা উদয়ন গুহের ‘ঝাঁটা বাহিনীর’ চেয়ে অনেক বেশি। সুকান্তের কথায়, ‘‘উদয়নের প্রেস্টিজ রক্ষা করতে তাঁর চ্যালার মতো কাজ করেছে পুলিশ’। তবে আমরা উদয়ন গুহের বুকের উপরে উঠে দিনহাটাতে গিয়ে ওঁকে হারাব। পুলিশ না-থাকলে ২ মিনিটে বাড়িছাড়া হয়ে যাবেন উদয়ন। পুলিশের জন্য বাড়িতে থাকতে পারছেন।’’
এর পাল্টা আবার সুকান্তকে কটাক্ষ করেছেন উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ বুঝতে পেরেছিল যে, ওরা এসেছে একটা অশান্তি সৃষ্টি করতে। ওর যদি কোনও কর্মীর বাড়িতে আসার দরকার হয়, এত লোকজন নিয়ে আসবে কেন? পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা মনে করেছে, তাই করেছে। এর সঙ্গে আমার তো কোনও সম্পর্ক নেই।’’ পর ক্ষণেই মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমি ষাঁড় না গরু, আমি বাঘ না হরিণ, সেটা মানুষ ঠিক জানে। আর ওরা (বিজেপি) তো দেখেই নিচ্ছে। দেখে নেওয়া মানে তো ইডি আসে। সিবিআই আসে। আরও কত কেন্দ্রীয় সংস্থা আসে। আমাদের এত নেতাকে দেখে নিচ্ছে, আমাকেও দেখে নিতে পারে। কিন্তু উদয়নের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির কথা বলতে পারবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘উদয়ন দুর্নীতি করেছে, চাকরি দিয়ে টাকা নিয়েছে, কয়লা পাচার করেছে, গরু পাচার করেছে— এই কথাগুলো বললে মানুষ ওদের মুখে থুতু দেবে।’’