সংগ্রাম: ট্রেনে ফেরা নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ। মিলছে না জল, খাবার এমনকি শৌচের জরুরি পরিষেবাও। রবিবারই রাজস্থান থেকে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের এক শ্রমিকের। রায়গঞ্জ স্টেশনেও সপ্তাহ দুয়েক ধরে মালপত্র, শিশু সন্তানদের নিয়ে এ ভাবেই ফিরছেন সহনাগরিকেরা। ছবি: চিরঞ্জীব দাস
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা। মালদহ টাউন স্টেশনে পাঁউরুটি, কেক, কলা হাতে পেয়ে চার বছরের মেয়েকে খাওয়াতে ব্যস্ত হবিবপুরের আইহোর বাসিন্দা ঝুমা কর্মকার। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্বামী বিশ্বজিৎ। ঝুমা বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৫ মিনিটে কেরলের স্টেশনে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে উঠেছিলাম। ওড়িশায় একবার ভাত পেয়েছিলাম। তাই তিন জনে মিলে খেয়েছি। তার পরে প্রায় ২০ ঘণ্টা ট্রেনে বিস্কুট খেয়েই কেটেছে। খিদেয় কান্নায় ছটফট করেছে মেয়ে। নিরুপায় হয়ে বসে থাকতে হয়েছে।” বিশ্বজিৎ জানান, কেরলে প্যান্ডেল তৈরি করতেন। লকডাউনে অর্ধাহারেই দিন কেটেছে।
ঝুমা, বিকাশদের মতোই দীর্ঘ ট্রেন যাত্রায় রেল পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল বলেন, “কেরল থেকে ট্রেন ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার হয়ে ঢুকেছে মালদহে। কোথাও খাবার মেলেনি। ট্রেনের শৌচাগারও অপরিচ্ছন্ন। ঠিক মতো জলও মিলছে না।” অভিযোগ শোনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষও ছিল না বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “রুটি-রুজির টানে ভিন্ রাজ্যে গিয়েছিলাম। আর এখন এমন ভাবে আমাদের আনা হচ্ছে মনে হচ্ছে আমরা অপরাধী।” মালদহ ডিভিশনের ডিআরএম যতীন্দ্র কুমার বলেন, “যাত্রীদের পর্যাপ্ত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মালদহে মোট ২১টি ট্রেন পৌঁছেছে। অধিকাংশ ট্রেন কেরল, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং তেলঙ্গানার। ট্রেনে মালদহ ছাড়াও দুই দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদের যাত্রীরা রয়েছেন। ভিন্ রাজ্য থেকে এ দিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ট্রেনে করে ফিরেছেন মালদহে। তার মধ্যে চার শতাধিক রয়েছে দুই দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদের। এ দিন প্রায় ১২০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মালদহ টাউন স্টেশনে, দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। তাঁদের দাবি, এক একটি বাসে গড়ে ৪০ জন করে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। ভিন্ জেলার পাশাপাশি মালদহের যাত্রীদেরও বাসে করে নিজ এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিক ফিরলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বালাই নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদেরই একাংশের। তাঁদের দাবি, লালারসের নমুনা সংগ্রহ না করেই গ্রামের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। আর সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তবেই গ্রামে ফেরানোর দাবি তুলেছেন শ্রমিকদের একাংশ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রমিত রাজ্য থেকে যে সমস্ত শ্রমিক জেলায় ফিরছেন তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক পালদেন শেরপা বলেন, “সকল যাত্রীদের খাওয়ার এবং নিজ গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”