গৌরচন্দ্র মণ্ডল নিজস্ব চিত্র
জল্পনা ছিলই। পদত্যাগ করতে পারেন মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি। শেষপর্যন্ত হলও তাই। অনাস্থা নিয়ে আলোচনার আগেই পদত্যাগ করলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। বৃহস্পতিবার মালদহ ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে পদত্যাগপত্র তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৮ জুলাই সভাধিপতির অপসারণ নিয়ে তৃণমূলের পেশ করা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তার আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি। যদিও এই অনাস্থা আটকাতে বিজেপি-র পক্ষ থেকে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিলে শেষপর্যন্ত পদত্যাগই করলেন সভাধিপতি।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এই নিয়ে বলেছেন, ‘‘অনাস্থায় যে হার হতে চলেছে সেটা বুঝতে পেরেই বিজেপি হাই কোর্টে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আবেদন যখন আদালত খারিজ করে দেয়, আমরা মালদহবাসীকে বলতে চাই আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই জেলা পরিষদ সর্বাঙ্গীণ উন্নতির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে।’’
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই মালদহ জেলা পরিষদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগদান করেন তৃণমূল থেকে নির্বাচিত সভাধিপতি গৌরচন্দ্র, কর্মাধ্যক্ষ সরলা মুর্মু–সহ আরও কয়েকজন জেলা পরিষদের সদস্য। বিজেপি থেকে দাবি করা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন তারাই। যদিও বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর ফের বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরে আসেন কয়েকজন জেলা পরিষদ সদস্য। বিজেপি থেকে গৌরচন্দ্রকে মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হলেও তৃণমূল প্রার্থী সাবিত্রী মিত্র'র কাছে তিনি হেরে যান। গোটা রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই জেলা পরিষদ দখল করতে তৎপর হয়ে ওঠে তৃণমূল। প্রশাসনের কাছে পেশ করা হয় অনাস্থা প্রস্তাব। প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত হয় ৮ জুলাই এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল জানায়, মোট ৩৭ জন সদস্যের মধ্যে তাদের সঙ্গে আছেন ২৩ জন সদস্য। যেখানে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৯ জন সদস্য। বিজেপির পক্ষে দাবি করা হয় অনাস্থায় তাঁরাই জয়ী হবেন।
এই গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে গৌরচন্দ্র জানিয়েছে, ‘‘এই মুহুর্তে করোনা পরিস্থিতি চলছে। তাই সংক্রমণ এড়াতেই আপাতত অনাস্থা বিষয়ক সভা যাতে মুলতুবি রাখা হয় সেজন্যই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আদালত যখন বিষয়টি মানল না, তখনই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।’’ আগামিদিনে গৌরচন্দ্রকে ফের তৃণমূলে ফিরিয়ে আনা হবে কি না সে বিষয়ে কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘‘গৌরচন্দ্রের গায়ে বেইমান তকমা পড়ে গিয়েছে। বেইমান শুভেন্দুর হাত ধরে তিনি তৃণমূলের ক্ষতি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কটূক্তি করে দল বদলেছিলেন তিনি।’’ পাল্টা গৌরচন্দ্রের দাবি, তৃণমূলে ফিরে আসার কোনও চিন্তাভাবনা নেই তাঁর। আগামিদিনে লড়াইয়ের ময়দানেই তিনি নিজেকে সামিল করতে চান।