মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
রাত হলেই বোমাবাজির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। রাজ্যের শাসক দলের এক উপ-প্রধানের বাড়িতে গুলি-বোমা ছুড়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে। আবার, দলীয় কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ তুলে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের ঠিক আগে রাজনৈতিক লড়াই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করায় বিব্রত কোচবিহার জেলা পুলিশের কর্তারা।
সেই সঙ্গেই রাসমেলা দু’দিন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করেও প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় কোচবিহারে নিরাপত্তা জোরদার করতে এখন থেকেই কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছে পুলিশ। কোচবিহারের জেলা পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বালকর ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশের একাধিক অফিসারকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গেও সম্পর্ক রেখে কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে নিরাপত্তায় কোনও খামতি থাকবে না। আর জেলায় যে যে অভিযোগ উঠছে, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই কোচবিহারে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয়। সেই সময় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়েও বারে বারে বোমা ও গুলির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক খুনের অভিযোগও উঠেছে।
লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে লড়াইয়ে বারে বারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কোচবিহার। পুলিশ একাধিক জায়গা থেকে বোমা উদ্ধার করেছে। আগ্নেয়াস্ত্র সহ একাধিক গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও রয়েছে। তার পরেও অবশ্য অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
দুইদিন আগে ভেটাগুড়িতে তৃণমূলের নেতা একটি গ্রাম পঞ্চায়েত উপ প্রধানের বাড়িতে গুলি-বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। আবার তার দু’দিন আগে বিজেপির কর্মীদের বাড়িতে বোমাবাজি করে মারধরের অভিযোগ হয়। কিভাবে রাজনৈতিক দলের সদস্যদের হাতে বোমা-পিস্তল যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারে বারে।
পাশাপাশি, বিজেপির যুব সংগঠনের কোচবিহার জেলার সহ সভাপতি দীপঙ্কর দেবের মৃত্যু হয়েছে। দুর্গা পুজোর অষ্টমীর রাতে বাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিলেন দীপঙ্কর।
বিজেপির অভিযোগ, জমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় দীপঙ্করকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের নাম উঠে এসেছে। তা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিজেপি। সব মিলিয়ে পরিস্থতি অনেকটাই জটিল।
এ দিন, বুধবার, তুফানগঞ্জের মহিষকুচি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন ছিল। তা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, যাতে নতুন করে আর কোনও গন্ডগোল না হয় সে দিকে তাকিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
যদিও তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “জেলা শান্তই। বিজেপি দু-এক জায়গায় গন্ডগোল করার চেষ্টা করছে।” বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূলেই সমস্ত দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছে।’’