তৈরি হচ্ছে মনসা মূর্তি। — নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর তিথি নক্ষত্র মেনে পাঁচ দিন মনসা পুজো করেন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের ফুলঘরা গ্রামের মানুষ। আত্রেয়ী নদীর পশ্চিম ধারে বোয়ালদার অঞ্চলের অধীন জল জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকাটিতে সাপখোপের আধিক্য বেশি ছিল। সাপের ছোবলের ঘটনা লেগেই থাকত। বাসিন্দাদের কথায়, তারপরই দুর্গাপুজোর তিথিতে শুরু হয়েছিল মনসা পুজো।
কালে কালে গ্রামের ওই বেদিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বিরাট পাকা মন্দির। মা মনসা বারোয়ারি মন্দির কমিটি গড়ে সেখানে দুর্গাপুজোর রীতি নিয়ম মেনেই মনসার মূর্তি গড়ে পুজো উৎসবে এ বারেও প্রস্তুতিতে সামিল গোটা গ্রামের মানুষ। পুজো কমিটির কর্মকর্তা রঞ্জিত চক্রবর্তী, ভজন মণ্ডল বলেন, “গ্রামের এই মনসা পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। পুরোহিত থেকে ঢাকি এবং মৃৎশিল্পী বংশ পরম্পরায় পুজোর সঙ্গে যুক্ত।”
কথিত আছে, বহু যুগ আগে আত্রেয়ীতে ভেসে যাওয়া দেবীর বিসর্জনের কাঠামো তুলে আনেন গ্রামের এক ব্যক্তি। সেই কাঠামোতে গ্রামে মনসা পুজো করেন।
দুর্গা পুজোর মতো এই ক’টা দিন ফুলঘরা সহ আশপাশের মানুষ ঐতিহ্যবাহী এই মনসা পুজো উৎসবে সামিল হন। পাড়ার মেয়ে জামাইরা চতুর্থীর মধ্যেই গ্রামে চলে আসেন। গ্রামের বধূ আরতি সরকার, সীমা সরকার, শেফালি সরকারেরা বলেন, “দুর্গাপুজোর মতোই জাঁকজমকের সঙ্গে গ্রামের এই পুজো ছেড়ে আমাদের কারও অন্য কোথাও যেতে মন চায় না।” পুজোর বৈশিষ্ট্য, গোটা ফুলঘরা গ্রামের মানুষ এই ক’টা দিন নিরামিষ খেয়ে ভক্তি ভরে মনসার পুজোয় সামিল হন। পুরনো রীতি মেনে এ বারেও হবে মঙ্গল গান। সপ্তমী থেকে নবমী, পুজো মণ্ডপে রাত জেগে চলবে পালাগানের আসর। এ বারেও মন্দিরে চার হাত রূপী দেবী মনসার মূর্তি গড়ার কাজ চলছে। দেবীর ডান দিকে রয়েছে লক্ষ্মী এবং বাঁ দিকে সরস্বতী।