আসন শূন্য: জেলা সভাধিপতির ঘর এখন এমনই ফাঁকা পড়ে রয়েছে বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র
জেলা পরিষদের জটিলতা বেরনোর পথ খুঁজতে পঞ্চায়েতের আইনের বই ঘাঁটতে ব্যস্ত জেলা প্রশাসন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়াতেই ওই জটিলতার তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এর আগে শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলররা দল বদল করায় পুরসভা গেরুয়া শিবিরের দখলে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে এই প্রথম কোনও জেলা পরিষদ শাসকের হাত থেকে বিরোধী বিজেপির অধীনে যেতে বসেছে। তা আটকানোর রাস্তা খুঁজতে গিয়ে পরিস্থিতি রীতিমতো জটিল। তা টের পাচ্ছেন প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরো বিষয়টি ডিভিশনাল কমিশনারের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিয়েছে জেলাপ্রশাসন।’’
১৮ আসন-বিশিষ্ট জেলা পরিষদের সভাধিপতির নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০ জন সদস্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি। ফলে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বোর্ডের ক্ষমতা বিজেপিতে চলে গিয়েছে বলে দলের জেলা সভাপতি শুভেন্দু সরকার দাবি করেন। জেলা সভাপতির অধীন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি সদস্যেরা বোর্ড পরিচালনার ক্ষমতা অধিকারী কিনা, এই প্রশ্নে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যে কোনওদিন তাঁরা জেলা পরিষদে গিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে। কিন্তু শাসক দলও জায়গা ছাড়তে নারাজ। অর্পিতা ও বিপ্লব— দুই শিবিরের সাম্প্রতিক যুযুধান অবস্থান দেখে ফাঁপড়ে পড়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। এই অবস্থায় তাঁদের কী করণীয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট নন বলে জানান জেলা পঞ্চায়েতের এক অফিসার। তিনি জানান, পঞ্চায়েত আইনের বই ঘেঁটেও জটিলতা মেটানোর রাস্তা মেলেনি। জেলা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক কাজলকান্তি সাহা জানান, পরিস্থিতির সমাধানে তাঁরা কোনও রাস্তা তারা খুঁজে পাননি। তাই ডিভিশনাল কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।
পঞ্চায়েত দফতর জানিয়েছে, বোর্ডের মেয়াদ আড়াই বছর না হলে অনাস্থা আনা যাবে না। আবার পঞ্চায়েত আইনে মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য দলবদল করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ওই সময়ের আগে সদস্যপদও বাতিল করা যাবে না। বিজেপি নেতা বিপ্লবের দাবি, সভাধিপতির নেতৃত্বে হলফনামা দিয়ে যে ১০ জন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা এখন বিজেপির সদস্য। তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে দলবদল করে তৃণমূলে নিয়ে যাওয়া হলেও বোর্ড চালানো সম্ভব হবে না। দলের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন থেকে ডিভিশনাল কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বলে বিপ্লব জানান। অর্পিতা পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি স্বপ্ন দেখলেও তা বাস্তবে রূপায়িত হবে না। এক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।’’ তবে জেলা পরিষদ নিয়ে বল এখন ডিভিশনাল কমিশনারের কোর্টে। জানা গিয়েছে, সদস্যদের শুনানি ও আইনগত প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে তিনি পদক্ষেপ করতে পারেন।