—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রতি বছর শীতের মরসুমে কুয়াশার সুযোগ নিয়ে উত্তরবঙ্গে গরু ও কাশির সিরাপ পাচারের ঘটনা ঘটে। এটা নতুন কিছু নয়। কয়েকদিন আগে রায়গঞ্জের রুপাহার এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি পিকতআপ ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ছ’হাজার বোতল বেআইনি কাশির সিরাপ উদ্ধার করেছে। সপ্তাহখানেক আগে ইসলামপুরের রামগঞ্জ এলাকায় রাতের অন্ধকারে বহু গরু-সমেত তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন বাসিন্দারা। দু’টি ঘটনাতেই পুলিশের দাবি, কাশির সিরাপ ও গরু জেলার বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচারের ছক করেছিল পাচারকারীরা। প্রতি বছরই শীতের মরসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধরপাকড় চলে, ব্যস। এর চেয়ে আর বেশি কিছু হয় না।
আমার মতে, উত্তরবঙ্গ জুড়ে সীমান্তে শুধু বিএসএফের নজরদারি কিংবা রাস্তাঘাটে পুলিশের নজরদারি বাড়ালেই পাচারের ঘটনা রোখা সম্ভব হবে না। তা যদি হত, তা হলে পুলিশের ধরপাকড়ের পর ফের নতুন করে উত্তরবঙ্গ জুড়ে পাচারের ঘটনা বাড়ত না। আসলে, উত্তরবঙ্গে পাচার রুখতে হলে পুলিশ ও বিএসএফের কড়াকড়ির সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা এবং এক শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন। কারণ, কেউ শখে পাচারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি কাজে নামে না। ওই কাজে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু ও পুলিশের হাতে গ্রেফতারের আশঙ্কা থাকে। পরিবারের আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে অনেক নাবালক পাচারকারীদের জালে জড়িয়ে সামান্য টাকার বিনিময়ে পাচারের মতো অপরাধের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে, পাচার রুখতে হলে আইনি ব্যবস্থা ছাড়াও সমাজে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষকে সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে স্বনির্ভর করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফেও নিয়মিত সভা, বৈঠক ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে পাচারের মতো কাজের ঝুঁকি ও অপরাধের বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে হবে। এ ক্ষেত্রে, আগে পাচারের অভিযোগে ধৃতদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ, প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজে দিশা তৈরি করতে পারে। আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষ, নাবালকেরা পাচারের মতো অপরাধের ঘটনায় কেন জড়িয়ে পড়ছে, পাচারের কাজে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহজেই অনুধাবন করতে পারবে।
এ ছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মাদকের বিরুদ্ধেও মানুষকে নিয়মিত সচেতন ও সতর্ক করার কাজ চালু রাখা জরুরি। কারণ, মাদকে নেশার খরচ জোগাতে অনেকেই চুরি, ছিনতাই ও পাচারের মতো কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন মালবাহী গাড়ির চালকদেরও বেআইনি জিনিস বহন না করার বিষয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের নিয়মিত প্রচার চালানো জরুরি। আমার মতে, পিছিয়ে পড়া একটি শ্রেণিকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করা ও তাঁদের অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা হলে শুধু উত্তরবঙ্গে কেন, সারা রাজ্যেই পাচারের ঘটনা অনেকটাই রোখা সম্ভব হবে।
(প্রধান শিক্ষক, হাতিয়া হাইস্কুল, রায়গঞ্জ)