আত্রেয়ী নদীর জলের গভীরতা মাপা হচ্ছে। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র।
শুকিয়ে যাচ্ছে আত্রেয়ী। তার জেরে জলসেচে ক্ষতির অভিযোগ আগেই উঠছিল। এ বার আত্রেয়ীর শীর্ণ দশায় পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প নিয়ে সমস্যায় পড়ল খোদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভা।
আত্রেয়ীর জলের উপর ভরসা করে বালুরঘাট শহরে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে পুরসভা। ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পে নদীর জল পরিশুদ্ধ করার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বর্তমানে নদী থেকে জল তোলার জন্য কাজে নেমে আত্রেয়ীর শুখা চেহারা দেখে উদ্বিগ্ন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ররা। তাঁদের বক্তব্য, রোজ আত্রেয়ী থেকে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ লিটার জল তুলে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে শোধনের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু নদী যেভাবে শুকিয়ে গিয়েছে, তাতে ওই পরিমাণ জলের যোগান পেতে সমস্যা হবে। এই পরিস্থিতিতে নদীর নীচের ভূগর্ভস্থ জল এ ক্ষেত্রে ওই প্রকল্পটিতে ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা উঠেছে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প বদলের সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন ইঞ্জিনিয়রেরা। তাই উদ্বিগ্ন তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুর কর্তৃপক্ষও। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠাব।”
সোমবার শহরের কংগ্রেস ঘাটে প্রস্তাবিত ইনটেক পয়েন্টে যান ইঞ্জিনিয়রেরা। সেখানে নদীর জলের মাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। পরে রাজেনবাবু বলেন, “কিছুদিন আগেও স্রোতস্বিনী ছিল আত্রেয়ী। গরমের সময় নদীর জল কিছুটা কমলেও ছোটবেলা থেকে দেখেছি কংগ্রেস ঘাটে সব সময় পর্যাপ্ত জল থাকে। অথচ আত্রেয়ী এখন শীর্ণ ধারা। চারদিকে জেগে উঠেছে বালির চর। ফলে নদী থেকে প্রয়োজনীয় জল তুলে শোধন করে বাড়িতে সরবরাহের ওই প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ দিন পুরসভা থেকে রাজ্যের মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে(এমইডি) পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে।” প্রকল্পটি পরিবর্তন করা সম্ভব কি না, তারও পরামর্শ চাওয়া হবে বলে ভাইস চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সেচবাঁধ দিয়ে জল আটকানোর অভিযোগের জেরে আত্রেয়ী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরেই আত্রেয়ী বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। মত্স্যজীবী কিংবা চাষিরাই নন, জল প্রকল্প ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হতে নাগরিক সমাজও সমস্যার সম্মুখীন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১০-১১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার বালুরঘাট শহরে বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে পুরসভাকে ৪২ কোটি টাকা দিয়েছিল। ভরা আত্রেয়ীর জলকে ব্যবহার করেই প্রকল্পটি তৈরির চুড়ান্ত নকশা কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের অনুমোদন পেয়েছিল।
বালুরঘাট পুরসভা ওই প্রকল্পে শহরের কংগ্রেস ঘাটে ‘ইনটেক পয়েন্ট’ করে আত্রেয়ী নদী থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পাঠাতে উদ্যোগী হন। সম্প্রতি মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়র, সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়র, এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রেরা বালুরঘাট গিয়ে ওই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সরজমিনে দেখে যান। পরে অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়র অসীম সরকার বলেন, “শহরের হোসেনপুরে জল শোধনের জন্য তৈরি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এলেও ইনটেক পয়েন্টের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। শহরে চারটি জলাধার তৈরি করা হয়েছে।” চলতি ২০১৫ সালের অগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল বালুরঘাট পুরসভা। কিন্তু প্রকল্পটির মূল জল যোগানের উত্স আত্রেয়ী নদী জলহীন হয়ে পড়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ থেকে বাসিন্দাদের অনেকেই সংশয়ে।