প্রতীকী ছবি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটা। হঠাৎই অসম সীমানা লাগোয়া বক্সিরহাটের গরুহাটিতে হানা দেয় ছ’ব্যক্তি। স্থানীয় এক গরু ব্যবসায়ীকে তারা রিভলভার দেখিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চায় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে স্থানীয় মানুষ তাদের পথ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে ওই দলটি শূন্যে ছ’রাউন্ড গুলি চালায়। পরে জানা যায়, ওঁরা অসম পুলিশের লোকজন। গরুহাটিতে আব্দুল জব্বর ব্যাপারী নামে এক গরু ব্যবসায়ীর খোঁজে এসেছিলেন তাঁরা। আব্দুলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে অসমে। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়েই গোল বাঁধে। এই ঘটনায় স্থানীয়দের ছোড়া ইটে অসম পুলিশের দুই কর্মী জখমও হন। এই ঘটনায় প্রেক্ষিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অভিযোগ করেন, পুলিশের কাপড় পরে অসমের বিজেপির হার্মাদরা সীমানা সংলগ্ন বক্সিরহাট এলাকায় এসে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করছে। যদিও বক্সিরহাট থানার আধিকারিক উত্তম শর্মা জানান, অসমের পুলিশ বক্সিরহাট থানাকে জানিয়েই এলাকায় এসেছিল।
পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘সাধারণ পোশাকে এসেছিল বলেই পুলিশকে চিনতে পারিনি আমরা।’’ তাঁদের বক্তব্য, এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে কয়েক জন তুলে নিয়ে যাচ্ছে— এমন খবরেই উত্তেজনা বাড়ে এলাকায়। অসমের ধুবুরি জেলার ডিএসপি ত্রিনয়ন ভুঁইয়া জানান, ‘‘গোপন সূত্রে খবর ছিল, বক্সিরহাট গরুহাটি বাজার এলাকায় গরু পাচার চক্রের সাথে যুক্ত আব্দুল জব্বর ব্যাপারী রয়েছেন। তাঁর নামে অনেক মামালা আছে আমাদের কাছে। দীর্ঘদিন তাঁকে আমরা খুঁজছিলাম। এ দিন বক্সিরহাট থানাকে জানিয়েই তাঁকে গ্রেফতার করতে গেলে অন্য গরু ব্যবসায়ীরা আমাদের উপর চড়াও হন। পাথর ছোড়া হয়। আমি নিজেও গা ঢাকা দিয়ে ছিলাম ওই এলাকায়। সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসার জন্য শূন্যে গুলি ছোড়া হয়েছে। তবে ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।’’ অসম পুলিশ সূত্রে খবর, জখম দুই পুলিশ কর্মীর নাম পরাগজ্যোতি চৌধুরী অপরজন রাহুল অধিকারী।
এই নিয়ে পরে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশের জামা গায়ে অসমের বিজেপির হার্মাদরা বাংলায় এসে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে। অপরাধী গ্রেফতারের বিষয় থাকলে সেখানে আমাদের রাজ্য সরকারের পুলিশও থাকত।’’ গুলি চালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় এসে গুলি চালানোর অধিকার অসম পুলিশের নেই। আগে আমার সরকারের অনুমতি নেওয়া দরকার ছিল। তেমনটা হয়নি।’’
তুফানগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির পর্যবেক্ষক উৎপল দাস বলেন, ‘‘একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। অসমের পুলিশ নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে বক্সিরহাট পুলিশকে জানিয়েই এসেছিল।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অনেক মামালা রয়েছে। মন্ত্রী অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন এবং সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করছে।’’