পুরসভার পার্ক। সারা বছর তারাই দেখভাল করে। রবিবার বিকেলে ঘটা করে শিলিগুড়ির ওই সূর্যসেন পার্কে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে টয়ট্রেন চালু করা হল। অথচ অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানোয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে ‘অসভ্যতা’ এবং ‘দলবাজির’ অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন বিকেলে পতাকা নেড়ে ওই ট্রেনের উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল, দুলাল দত্তের মতো তৃণমূলের কাউন্সিলরদের অনেকেই এবং তাঁদের পরিবারের লোকদের একাংশ। অথচ মেয়রকে আমন্ত্রণ না জানানোয় তিনি ক্ষুব্ধ। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার সূর্যসেন পার্কে বিক্ষোভ আন্দোলনও করা হবে বলে মেযর জানিয়ে দেন। দলমত নির্বিশেষে সমস্ত কাউন্সিলরদের কাছে মেয়র আহ্বান করেছেন ওই প্রতিবাদ সভাতে উপস্থিত থেকে এর বিরুদ্ধে সকলেই যেন সরব হন। এমনকী মেয়র হিসাবে এর বিরুদ্ধে তিনি নাগরিক সভাও ডাকবেন বলে জানিয়েছেন।
বিধায়ক হিসাবে শঙ্কর মালাকারকে বা বিজেপি’র কাউন্সিলরদের আমন্ত্রণ না জানানোয় আলাদা ভাবে সরব হয়েছে কংগ্রেস এবং বিজেপি-ও। পুরসভা থেকেই জানাগিয়েছে, মেয়রকে না ডেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়াকে চিঠি দিয়ে ট্রয়ট্রেন প্রকল্পটি পুরসভাকে হস্তান্তর করা হবে জানিয়ে তাঁকে থাকতে বলেছেন। পুর কমিশনার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। মেয়রকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সবের কোনও উত্তর দিতে চাই না। তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে পুরসভাকে অর্থাৎ এক দফতর থেকে আরেক দফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কোনও কার্ড ছাপানো হয়নি। বিজ্ঞাপন দিয়ে সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই মতো আমাদের দলের কাউন্সিলরদের অনেকে এসেছেন।’’
দু দিন আগেই এসজেডিএ’র উদ্যোগে চতুর্থ মহানন্দা সেতু হয়ে মাটিগাড়া যাতায়াতের নতুন রাস্তার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিধায়ক শঙ্করবাবু বা মেয়রকে না ডাকায় একই ভাবে দলবাজির অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, সম্প্রতি পুরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার জন্য মেয়রের অনুরোধে উত্তরকন্যায় তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। সেখানে মেয়রকে কেক, ফিশফ্রাইও খাইয়েছিলেন। তা নিয়ে দলের অন্দরে সমালোচনাও হয়। তা চাপা দিয়েই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সক্রিয় হয়েছেন বলে দলের-ই একাংশের ধারণা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুরবোর্ড ভেঙে গেলে প্রশাসক বোর্ড চালাচ্ছিলেন। সে সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে পুরসভার অনুমতি নিয়ে সূর্যসেন পার্কে টয়ট্রেন চালুর প্রকল্প নেওয়া হয়। ২ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই প্রকল্প এ দিন চালু হয়। প্রকল্পটি পুরসভার হাতে দেখভালের জন্য তুলে দেওয়া হয়। পার্কে এসে উৎসাহীরা ট্রেনের চড়ার ক্ষেত্রে কত ভাড়া দিতে হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। পুরসভার তরফেই তা ঠিক করা হবে। তবে এ দিন তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানোয় মেয়র বলেন, ‘‘মেয়র পদটি শহরের প্রথম নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হয়। তাঁকে এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করে নাগরিকদের অমর্যাদা করা হয়েছে। এর আগেও মেয়র পদকে এ ভাবে উনি অমর্যাদা করতেন। কিন্তু তখন যিনি ছিলেন তিনি ছেড়ে দিতেন। তবে আমি ছাড়ার পাত্র নই। এ ধরনের ঘটনা অসাংবিধানিকই শুধু নয়। অসভ্যতা-ও। এর প্রতিবাদে সোমবার প্রতিবাদ আন্দোলন হবে। শীঘ্রই শহরে নাগরিক কনভেনশন করে বিষয়টি জনগনের সামনে তুলে ধরা হবে।’’ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের বিরোধী দলগুলিও। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর জ্যোৎস্না অগ্রবাল জানিয়েছেন, পার্কটি তিনি ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর থাকার সময় চালু হয়েছিল। সেই সময় বামফ্রন্টের দখলে থাকা পুরসভার তরফে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে একই অসৌজন্য আচরণ তাঁরাও করছেন কেন? জ্যোৎস্না দেবী জানান, সেটা আলাদা বিষয় তবে পথ দেখিয়েছেন বামেরাই।
শিলিগুড়ির বাসিন্দা তথা ফাঁসিদেওয়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার মনে করেন শহরে প্রকল্পের উদ্বোধনে তাঁকেও ডাকা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘‘গত চার বছর ধরেই এ ধরনের অসৌজন্য আচরণ করে আসছেন গৌতমবাবুরা। আমাদের মেয়র থাকার সময়ও তাকে ডাকা হত না। জনগণ সব দেখছেন। সময় মতোই তারা এর জবাব দেবেন।’’ কংগ্রেসের পুরবোর্ডের সময় মেয়র ছিলেন গঙ্গোত্রী দেবী। তিনি জানান, এ ধরনের অসজৌন্য আচরণ তাঁর সময়েও করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন এই ধরনের অসভ্যতা শুধু যে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী করছেন তা নয়। অশোকবাবুও করছেন। বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, ‘‘সম্প্রতি ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে শহরে পরিবেশ রক্ষার উপরে একটি কনভেনশন করা হয়েছিল পুরসভার তরফে। দলমত নিবির্শেষে সেখানে সকলকে ডাকা উচিত ছিল। অথচ আমাদের কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’’