ক্রীড়াপ্রেমী: রাশিয়ায় নীল-সাদা শাড়িতে শর্মিষ্ঠাদেবী।
প্রায় ৬৭ হাজার দর্শকে ভরা সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম দেখেছিল শাড়ি পড়া এক বাঙালি বধূকে। মেসির পায়ে বল আসামাত্র চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন সেই বধূ। আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার রঙে রং মিলিয়ে তাঁর শাড়ি নীল ডুরে কাটা, উঁকি দিচ্ছে সূর্যও। ২৬ জুন দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা যে বধূর শাড়ির ছবি লেন্সবন্দি করেছিল। সেই বধূর ঠিকানা জলপাইগুড়ি। ওই দম্পতি সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে থাকা হাজার-হাজার আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মন জিতে নিলেও, আপাতত মন ভাল নেই তাঁদের।
শনিবার, রাত সাড়ে ন’টা, শেষ ষোলোর ম্যাচ তখন সবে শেষ হয়েছে। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। আর রাশিয়ার বহুতল হোটেলের ঘরে টিভি সেট বন্ধ করে ব্যাগ গোছানো শুরু করেছেন জলপাইগুড়ির ওই দম্পতি। আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখবেন বলেই রাশিয়ায় গিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির আইনজীবী ত্রিদিব দে, তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা এবং ছেলে তমোঘ্ন। আর্জেন্টিনার সঙ্গে নাইজেরিয়ার খেলা দেখেছেন স্টেডিয়ামে বসে। শনিবার রাশিয়ার কাজানে হওয়া আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফ্রান্সের খেলার টিকিটও খুঁজেছিলেন। কিন্তু তাঁরা জানান, যে দর উঠেছিল তা তাঁদের সাধ্যের বাইরে। ইচ্ছে ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা উঠলে যে করেই হোক টিকিট জোগাড় করবেন।
রাশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা দেশের পোর্টালে ইতিমধ্যেই এই দম্পতির ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কাছেও ভাইরাল হয়েছে ছবিটি। শর্মিষ্ঠাদেবী জানালেন, খেলা দেখতে যাবেন বলে স্থির হওয়ার পরেই কলকাতার একটি বুটিকে শাড়ির অর্ডার দিয়ে ফেলেন। তাঁর কথায়, “আমার স্বামী আর ছেলে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে খেলা দেখবে বলে ঠিক করেছিল। আমি ভাবলাম অন্য কিছু করি। সেখান থেকেই শাড়ির ভাবনা।”
একটি মাত্র ম্যাচের টিকিট হাতে পেয়ে রাশিয়ায় সপরিবার বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন আইনজীবী ত্রিদিববাবু। তাঁর কথায়, “শর্মিষ্ঠার শাড়ি তো আমাদের সেলিব্রিটি করে দিয়েছিল। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা ছবি, নিজস্বী তোলার আবদার করেই চলেছেন।’’ নাম ভুলে গেলেও শর্মিষ্ঠাদেবীর অনেকদিন মনে থাকবে আর্জেন্টিনার দুই তরুণীর কথা। দু’জনেই নীল-সাদা কাপ়ড় গলায় জড়িয়েখেলা দেখতে এসেছিলেন। একজনের মাথায় মুকুটও ছিল। নীল-সাদা শাড়ি পরা শর্মিষ্ঠাদেবীকে দেখে জড়িয়ে ধরিয়েছিলেন তাঁরা। মাথার মুকুট খুলে শর্মিষ্ঠাদেবীকে পরিয়েও দিয়েছিলেন। দল হেরে যাওয়ার শোকে এখন সেই স্মৃতিরই প্রলেপ দিচ্ছেন তাঁরা।