কাঠের দূর্গা গড়ছেন অপূর্ব। ছবি: রাজু সাহা।
কাঠখোট্টা হাতুড়ি-বাটালের নিপুণ খোদাইয়ে গামার কাঠের গুঁড়িতে ফুটে উঠছে দেবীর চোখের ভাঁজ। সেজে উঠছে দশ হাতের নিখুঁত ভঙ্গিমা। চার মাস ধরে দিনরাত এক করে দেবীর এই রূপ ফুটে উঠছে দেবীনগরের এক যুবকের হাতে।
আলিপুরদুয়ার শহরের দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা অপূর্ব সাহা ওই এক খণ্ড কাঠেই ফুটিয়ে তুলছেন অসুর, সিংহ-সহ দশভুজার সংসার।
অপূর্ববাবুর ইচ্ছে, এ বার দুর্গা পুজোর চার দিন তাঁর গড়া মূর্তি কোনও প্যান্ডেলে শোভা পাক। জানালেন, কাঠের মিল থেকে আটশো টাকা দিয়ে একটি গামার গাছের গুঁড়ি কিনে আনেন। সেটি খোদাই করে দুর্গা মূর্তি গড়তে বিভিন্ন আকৃতির ছোট বড় বেশ কয়েকটি বাটাল ও হাতুড়ি কিনতে হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর ইচ্ছে ছিল দুর্গা মূর্তি গড়ার। তবে এত তাড়াতাড়ি সেটা সম্ভব হবে, ভাবতে পারেননি।
এর আগে অপূর্ববাবু কাঠ খোদাই করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কালী, সরস্বতী-সহ অনেক মূর্তি গড়েছেন। দুর্গা মূর্তি এই প্রথম। দুর্গা, অসুর, সিংহ গড়ে উঠলেও এখনও বাকি কার্তিক গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতী গড়ার কাজ। এর পর আরও বড় আকারে কাজ করার ইচ্ছে আছে তাঁর। যদিও খেদ রয়েই গিয়েছে, ‘‘এ ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা আমার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’’
অপূর্ববাবুর বাড়ি দেবীনগরের নারু স্মৃতির গলিতে। ছবি আঁকা তাঁর নেশা এবং পেশা দুইই। বাবা ছিলেন গাড়ি চালক। তাঁর দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েন। মাত্র ২২ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয় অপূর্ববাবুকে। ছবি আঁকা শিখিয়ে সংসার চলে। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক সমস্যা থাকলেও সেটাকে দূরে সরিয়ে রেখে আমার শিল্প সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই আজীবন।’’ পাড়ার ছেলের এমন কাজে খুশি সবাই। বাসিন্দাদের জানান, অপূর্ব তাঁদের গর্ব।