অশান্তি এড়াতে, কার্শিয়াং, রোহিনী, শিমুলবাড়ি সহ সুকনা। সমস্ত এলাকাই ঘুরে দেখছেন জিটিএ প্রধান অনিত থাপা। ছবি: স্বরূপ সরকার।
সকাল থেকেই কার্শিয়াং জুড়ে ঘন কুয়াশা, সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। স্থানীয় নয়া বাজারের সাজানো বাড়িটির সামনে গাড়ির লাইন অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। ভিতরে বসার ঘরে কাঠের চেয়ারে বসে ঘনঘন ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ব্যস্ত ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর প্রধান তথা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান অনীত থাপা। আবহাওয়ার নজরের সঙ্গে খোঁজখবর চলছে গোটা দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের। প্রার্থী থেকে দলের কেন্দ্রীয় স্তরের নেতানেত্রীর সঙ্গে নিজের যোগাযোগে ব্যস্ত অনীত। গ্রামীণ স্তর থেকে এক দফায় পরিস্থিতি বুঝে স্নান-খাওয়া সেরে আবারও ফোন। এ বার নির্দেশ, ‘‘কোনও গোলমাল হবে না। শান্তিতে ভোট করাতেই হবে। সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’’
একটু বেলা বাড়তেই নয়া বাজার থেকে গাড়ি বার হল কার্শিয়াং বাজারের পথে। পুর এলাকায় রাস্তায় লোকজনের সঙ্গে দেখা করে সোজা সরকারি অতিথি নিবাস কার্শিয়াং টুরিস্ট লজে গাড়়ি ঢুকল অনীতের। খোঁজ পেয়ে দু’টো পুলিশ ভ্যান হাজির। কড়া নির্দেশ, ‘‘কোনও সাইরেন, হুটার বাজবে না। গাড়িতে কোনও পুলিশ থাকবে না।’’
পাহাড়ি লঙ্কা ডল্লোর লাল চাটনি দিয়ে মোমো খেতে ভালবাসেন জিটিএ প্রধান। সঙ্গে দার্জিলিং চা। এক দফায় তা খেয়ে দুপুর অবধি বসে রইলেন অতিথি নিবাসে, একেবারে কোণের একটি অংশে। তাঁর কথায়, ‘‘রেস্তরাঁয় বা অন্য দিকে বসলে লোকজন ভিড় করেন। নানা অভাব অভিযোগ নিয়ে আসেন। আজ ভোট। সব নেতাদের নিজেদের এলাকায় থাকতে বলেছি। ভালই ভোট হচ্ছে। তেইশ বছর পরে পাহাড়ের গ্রাম জনপ্রতিনিধি পাবে।।’’
বেলা গড়াতেই নানা সমস্যার ফোন, মেসেজ আসা শুরু— দেরিতে ভোট চলছে। বয়স্করা ভুল বাক্সে ব্যালট ফেলছেন। বৃষ্টিতে ত্রিপল দরকার। কেউ দু’টো করে ছাপ মেরে দিচ্ছেন— সবার কথা শুনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে দিতে বললেন, ‘‘পাহাড়ের সর্বত্র রাস্তাঘাট, পানীয় জল, আবাসন বা কৃষির ব্যবস্থা শুধু জিটিএ করতে পারে না। দুই জেলার জন্য আমাদের কী আর তহবিল! পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থাকলে রাস্তা, কালভার্ট, বিদ্যুতের এলাকাভিত্তিক কাজ হবে। জিটিএ সমন্বয় ঘটিয়ে বাকিটা করে দেবে।’’ এর মধ্যে কালিম্পং থেকে ফোন। বিজেপি প্রার্থীর গাড়ির ভাঙচুরের খবর। অভিযোগ তাঁর দলেরই লোকজনের বিরুদ্ধে। কিছু ক্ষণ চুপ করে ফোনে নির্দেশ— ‘‘‘কেন এ সব হচ্ছে! ভোট না করে গোলমাল করতে বলেনি দল!’’
এ বার অনীতের সঙ্গে লড়াই ‘মহাজোটের’। নেতৃত্বে বিজেপির রাজু বিস্তা। সঙ্গে বিমল গুরুং, মন ঘিসিং এবং অজয় এডওয়ার্ড। যদিও সকাল থেকে কেউ ছিলেন না ভোটের ময়দানে। রাজু সরকারি নিয়মে বার হতে পারেননি। অজয় বাবার চিকিৎসায় হায়দরাবাদে। মন ঘিসিং দার্জিলিঙের জাকির হোসেন রোডের বাড়িতে। আর বিমল গুরুং পাতলেবাসে নিজের ভোট দিয়ে সারাদিন বাড়িতেই। সবার খোঁজ দুপুরেই নিয়ে নেন অনীত। এক সময় বলেন, ‘‘রাজু বিস্তা মহাজোটের নামে যা করেছেন, তা অজয়-বিমলেরা পরে টের পেয়েছেন। আমি তাই গোর্খা ঐক্যের কথা বলেছি।’’
বিকেলে পাহাড়ের ঠিক নীচে নেমে ‘ফুল নেটওয়ার্ক জ়োন’-এ বসলেন অনীত থাপা। আর এক দফায় চলল খোঁজখবর। বুথে বুথে লম্বা লাইন আর সন্ধ্যার পাহাড়ে গোলমালের কথা মাথায় রেখে বিকেল ৫টার পরেও ভোট চলবে বলে পাহাড় জুড়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ল অনীতের। বললেন, ‘‘রাত অবধি ভোট হবে। বিদ্যুৎ থাকলেও পাহাড়ের মানুষের মোমবাতিই ভরসা। সন্ধ্যা থেকে সর্বত্র জ্বলবে।’’ মোমবাতি অনীতের দলের প্রতীক।