পতিরামে জমিদার বাড়ির পুজোয় প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। সোমবার বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
চণ্ডীমঙ্গল থেকে পালাগান, যাত্রাপালার মতো বিনোদনের আসরের সঙ্গে আশপাশের গ্রাম ভেঙে মানুষের ভিড়ে গণ উৎসবে পরিণত হতো দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার পতিরাম এলাকার জমিদার বাড়ির পুজো। ৩০০ বছরের বেশি আগে ঘোষ এস্টেটের জমিদার প্রয়াত রামসুন্দর ঘোষ দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। শূন্যে দোনালা বন্দুকের পর পর গুলির শব্দে দেবী বোধনের বার্তা পৌঁছে যেত দূরের অঞ্চলে।
গরুর গাড়িতে চড়ে, কেউ ছেলে বউ নিয়ে পায়ে হেঁটে জমিদারের খলায় তৈরি অতিথিশালায় ঠাঁই নিতেন। দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করে মণ্ডপে মোষ বলি এবং পর পর পাঁঠাবলির আধিক্যের জোয়ারে খুশি প্রজাগণের চওড়া হতো মুখের হাসি। পুজোর কটা দিন জমিদার বাড়িতেই পাত পেড়ে দুবেলা প্রসাদ খাওয়া থেকে বড় বড় হ্যাজাকের আলোয় ভরা সামিয়ানায় বসে রাতভর পালাগানের আসরে মজে থাকা মানুষের ভিড়ে পুজো উৎসবের দিনগুলিতে সকলে মেতে উঠতেন।
আজ জমিদারও নেই। নেই সেই জমিদারির জৌলুস। পুরনো সেই মন্দির সংস্কার করে সাত পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ বারেও দু্র্গাপুজোর আয়োজন করছেন বৃদ্ধ বংশধর সাগর ঘোষ। ৮৫ বছরের সাগরবাবুর কথায়, ‘‘পুরনো দিনের সেই যাত্রাপালা উৎসব আর হয় না।’’ তবে কলকাতা ও জলপাইগুড়ি থেকে আত্মীয় স্বজনরা সময় পেলে পুজোয় আসেন। আত্রেয়ী নদীপথে বাণিজ্যের সুবাদে পূর্ববঙ্গ থেকে পতিরামে এসে জমিদারি পত্তনের সঙ্গেই পারিবারিক দুর্গাপুজো শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। এখনও রীতি মেনে জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে সূচনা হয় জমিদার বাড়ির প্রতিমা গড়ার কাজ। পঞ্চমীতে দেবীবোধনে নারায়ণ পুজোর রীতি এখনও ধরে রেখেছেন সাগরবাবু। ঐতিহ্যের নিদর্শন প্রতীকী নৌকাও মণ্ডপে পুজো হয়।
অষ্টমীতে চন্ডীপুজো হলেও বলি প্রথা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এক সময় এই পুজো ঘিরে এলাকা-জুড়ে চলতো উৎসব। এখন এলাকার ক্লাব কমিটির সাড়ম্বর পুজোয় অনেক জৌলুস।’’ লোকবলের অভাব। পাশাপাশি আর্থিক সমস্যার কারণে জৌলুস হারালেও তিথি নক্ষত্র মেনে নিষ্ঠাচারে দেবীর পুজোর আয়োজন করে জমিদারের বংশধর সাগরবাবু এখনও সাতপুরুষের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন।