শ্রেয়সী আচার্য। নিজস্ব চিত্র।
এক দশক আগেই জন্ম হয়েছে গড পার্টিকেল বা ঈশ্বর-কণার। সেই সময়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয় বাঙালি পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম। কণাটির নাম দেওয়া হয় হিগস-বোসন কণা। এর প্রায় এক দশক পরে আরও এক বাঙালি কন্যা জড়িয়ে গেলেন ঈশ্বর কণার সঙ্গে। তিনি শ্রেয়সী আচার্য, শিলিগুড়ির মেয়ে এবং গবেষক। ঈশ্বর কণা আবিষ্কারের উপরে লেখা তাঁর গবেষণাপত্র ইউরোপীয় পরমাণু গবেষণা বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘সার্ন’-এর বিচারে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবারই।
শিলিগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতনগরের বাসিন্দা শ্রেয়সী এখন ফ্রান্সে অ্যালিস গবেষকদের দলে কাজ করছেন। মেয়ের সাফল্যের খবর আসতেই তাঁর বাবা পরিমল আচার্য এবং তাঁর মা মমতা আনন্দে আত্মহারা। তাঁরাই জানালেন, কনভেন্টে পড়া মেয়ে শ্রেয়সী বরাবর ভাল ছাত্রী। শিলিগুড়ির একটি কনভেন্ট স্কুল থেকে পাশ করার পরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর এবং পরে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষক হিসেবে কাজ করেন কলকাতায়। গত বছর থেকে তিনি সার্ন-এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন।
সার্ন-এ ভারত অ্যাসিয়োসিয়েট সদস্য। ২০১২ সালে সার্ন-এর বিজ্ঞানীরা ২৭ কিলোমিটার সুড়ঙ্গে প্রোটন কণার সংঘর্ষ ঘটিয়ে আবিষ্কার করেন বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরের মুহূর্তে তৈরি হওয়া পার্টিকেল বা কণা। সেই প্রোটন নিয়েই কাজ করেন শ্রেয়সীও। গত বছরের শেষ দিক থেকে ফান্সে এলাইস নামে একটি যন্ত্রের গবেষকদলে কাজ করছেন তিনি। যন্ত্রটি লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের আট রকমের সহযোগী যন্ত্রের একটি। তাঁর বাবা পরিমল বলেন, ‘‘আমিও বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। তবে মেয়ের মতো এতটা বড় স্বীকৃতি পাইনি। আজ পদার্থবিদ্যা নিয়ে ওর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে মনটা ভরে গেল।’’
পরিমল জানান, পরমাণুর ভিতরে থাকা প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের সংঘর্ষে অনেক রকমের কণা আবিষ্কারই শ্রেয়সীর গবেষণাপত্রের মূল কথা। বৃহস্পতিবার সার্ন-এ সেই অ্যালিস যন্ত্র সপ্তাহ পালিত হয়। সেখানেই তাঁর গবেষণা ‘শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্রে’রসম্মান পায়।
করোনার সময় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে এ বছর জুলাই থেকেই নতুন গবেষণায় মন দিয়েছে সার্ন। এই সময়ে শ্রেয়সীর গবষণার স্বীকৃতি নতুন দিশার জন্ম দিতেই পারে বলে মনে করছেন শিলিগড়িতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, বাঙালির বিজ্ঞান গবেষণায় নতুন করে আগ্রহ তৈরি করবে শ্রেয়সীর সাফল্য।