কার্ড সংশোধনে পড়শিরা ব্যস্ত, ধুঁকছেন বৃদ্ধ দম্পতি

স্থানীয় সূত্রে খবর, বয়স ও অসুস্থতার কারণে অনেক দিন ধরেই তাঁরা দিনমজুরের কাজ করতে পারেন না। দু’জনেই বাড়িতে ধুঁকছেন। পড়শিদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে তাঁদের খাবার দেন। কিন্তু এনআরসি নিয়ে আশঙ্কার জেরে তাতে ছেদ পড়েছে।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩২
Share:

অসহায়: জীর্ণ ঘরে যোগেন-বাহামণির সংসার। নিজস্ব চিত্র

নতুন নাগরিকত্ব আইনের জেরে পড়শিরা ব্যস্ত পরিচয়ের নথি সংশোধনে। আর তাতে তুমুল সঙ্কটে পড়েছেন অসুস্থ, বৃদ্ধ আদিবাসী দম্পতি। হাড়-কাঁপানো ঠান্ডায় কুঁড়েঘরে কার্যত অর্ধাহারে ধুঁকছেন তাঁরা। প্রশাসনিক সাহায্যের আশায় হতদরিদ্র ওই দম্পতি।

Advertisement

তপন বিধানসভা কেন্দ্রের বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদারের পশ্চিম কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা ৭০ বছরের যোগেন হেমব্রম ও তাঁর স্ত্রী বছর পঁয়ষট্টির বাহামণি সরেনের এমন অবস্থার কথা জানেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অনুকূলচন্দ্র দাস। রবিবার তিনি এলাকায় গিয়ে ওই অসহায় দম্পতিকে রুটি, বিস্কুট, মিষ্টি দিয়ে আসেন। কিন্তু এর পরে কী হবে তা বুঝতে পারছেন না অনুকূলও।

তাঁর বক্তব্য, এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের জেরে ওই দম্পতির পড়শিরা ভোটার, আধার কার্ড সংশোধনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের যেতে হচ্ছে ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে। ফলে প্রায় দু’মাস ধরে তাঁরা অসহায় ওই বৃদ্ধ দম্পতির দিকে তেমন ভাবে নজর দিতে পারছেন না। তাতেই প্রচণ্ড সঙ্কটে পড়েছেন দু’জনে। অনাহার, অর্ধাহারে দিন কাটছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, বয়স ও অসুস্থতার কারণে অনেক দিন ধরেই তাঁরা দিনমজুরের কাজ করতে পারেন না। দু’জনেই বাড়িতে ধুঁকছেন। পড়শিদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে তাঁদের খাবার দেন। কিন্তু এনআরসি নিয়ে আশঙ্কার জেরে তাতে ছেদ পড়েছে।

অনুকূল জানান, ব্লক প্রশাসনের তরফে তাঁদের ভাতা ও স্থায়ী সাহায্যের ব্যবস্থা করতে এ দিন তিনি আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দেড় বছর ধরে পঞ্চায়েত থেকে জিআর-এ (গ্রাচুইসাস রিলিফ) খাদ্যশস্য বিলি বন্ধ হয়ে রয়েছে।

এ দিন শ্বাসকষ্ট-জনিত রোগে অসুস্থ স্ত্রী বাহামণির পাশে বসে বৃদ্ধ যোগেনবাবু বলেন, ‘‘ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। ডাক্তারি পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধী বলে সরকারি ভাতা মেলেনি। মেলেনি অন্য ভাতাও। বাহামণিও পাননি বার্ধক্য ভাতা।’’ তিনি জানান, তাঁদের এক ছেলে আলাদা সংসারে থাকেন। অনটন তাঁরও নিত্যসঙ্গী।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রকাশ বর্মণ, জিতেন সরেন জানান— এনআরসির আশঙ্কায় অনেকেই আধার বা ভোটার কার্ডে তথ্য সংশোধনে ব্যস্ত। যোগেনবাবুদের সঙ্কটের কথা অনেকে জানেন। কিন্তু ব্যস্ততার জেরে সামান্য সাহায্যও এখন তাঁরা করতে পারছেন না।

তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করেনিনি বলে অভিযোগ। বাচ্চু অবশ্য জানান, অসহায় দম্পতিকে সাহায্য করা হবে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা কিস্কু এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement