একসঙ্গে: শিল্পপতিদের নিয়ে সিআইআই বৈঠক। বুধবার, শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে। ছবি: স্বরূপ সরকার।
উত্তরবঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এল।
বুধবার সকালে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে বিশ্ববাংলা শিল্পী হাটে এই বাণিজ্য সম্মলনের আয়োজন করা হয়। এই বৈঠকে থাকার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে তিনি সফর কাটছাঁট করে কলকাতায় ফিরে যান। তাই বৈঠক পরিচালনা করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ছিলেন বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিব এবং আধিকারিকেরা। ছিলেন উত্তরবঙ্গের ছোট, বড় শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরাও। সেখানেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, বস্ত্র, অন্য বাণিজ্য, পর্যটন মিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব আসে। উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গকে অন্যতম বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরতে অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট রাজ্য সরকার। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফরে এসে তার একটি রূপরেখাও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিনের বৈঠকে প্রায় ৪০০ জন উদ্যোগপতি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে অংশ নিয়েছিলেন। শিল্পতালুক, বিদ্যুৎচালিত তাঁত, বঙ্গশ্রীর ক্ষেত্রে রাজ্য কী ভাবে উৎসাহ দিচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। শিল্পে আবেদন এবং বিভিন্ন ধরনের অনুমতি পাওয়ার পদ্ধতি সরলীকরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের আশা, আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে ১৮টি শিল্পতালুক তৈরি হবে ৫৮০ একর জমির উপর। তাতে ২২১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ৩১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
তা ছাড়া রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের আরও ৭-৮টি শিল্পতালুকের কাজ চলছে। এগুলি বাদে ৬২৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং আটটি জেলা মিলিয়ে অন্তত ৩৭,৫০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে রাজ্য। চা-পর্যটন এবং সংশ্লিষ্ট পর্যটন ক্ষেত্রে ৬৩৬ কোটি
টাকা বিনিয়োগ এবং আড়াই হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করছে সরকার।
আলোচনায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পপতিরা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পর্যটন, শিল্পতালুক, চা পর্যটন, হর্টিকালচার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, সহ বেশকিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাগুলিতে সেক্টর কমিটিও করা হচ্ছে। সেক্টর কমিটিগুলিতে বিভিন্ন শিল্পপতিদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা থাকবেন। জেলায় শিল্পের ছোট প্রস্তাবগুলি দেখে সেগুলি তড়িঘড়ি বাস্তবায়িত করা হবে। উত্তরবঙ্গের শিল্পপতিদের জমি, জমি হস্তান্তর, কর, বিদ্যুৎ-সহ নানা অসুবিধার কথাও শোনেন মুখ্যসচিব। দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দেন। বেশ কিছু জেলায় পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা উঠে এসেছে। সেগুলিকেও সমাধানের কথা বলেছেন।
মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু ছোট শিল্পতালুক হচ্ছে। বিভিন্ন ব্লকেও শিল্পতালুক তৈরির কাজ চলছে। সেগুলিতেও বিনিয়োগের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। শিল্পের সুবিধার্থে রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দেওয়া হচ্ছে।’’ বালুরঘাট, কোচবিহারে বিমানবন্দর তৈরির কাজ দ্রুত করে পরিকাঠামো উন্নয়নও হবে বলে জানান মুখ্যসচিব। বণিক সভা সিআইআই-র উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জয় টিউব্রুওয়াল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়ে উত্তরবঙ্গের শিল্প-বাণিজ্যের জন্য যা করছেন তা প্রশংসনীয়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উত্তরের চেহারাটা বদলে যাবে।’’