ঝাড়গ্রাম থেকে বক্সার জঙ্গলে আনা সেই 'দুষ্টু' দাঁতাল। বর্তমানে খোঁজ মিলেছে মেঘালয়ে। ফাইল ছবি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মাস দেড়েক আগে, জঙ্গলমহল থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল বক্সায়। এরই মধ্যে বক্সা ছাড়াও, মানসের জঙ্গল পেরিয়ে ঝাড়গ্রামের সে ‘দুষ্টু’ দাঁতাল বক্সা ছাড়িয়ে ও অসম পেরিয়ে পৌঁছে গেল মেঘালয়ে।
বন দফতর সূত্রের খবর, অন্তত চারশো কিলোমিটার হেঁটে মেঘালয় পৌঁছাতে গিয়ে শুধুমাত্র সংকোশ নদীই নয়, ঝাড়গ্রামের সেই দাঁতাল পার করেছে ব্রহ্মপুত্র নদও। তবে কি বক্সার জঙ্গলে থাকা বাকি হাতিদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে বা নিজের সঙ্গীদের খোঁজেই পথ ভুল করে দাঁতালের মেঘালয় পাড়ি— ভাবাচ্ছে বনকর্তাদের। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
বন দফতরের একটি সূত্রের খবর, মেঘায়ল পৌঁছনোর আগে মাঝের এই সময়ে দাঁতালটিকে আবার বক্সায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও হয়। যদিও বক্সার বনকর্তারা তা মানতে নারাজ।
বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘বক্সায় পাঠানো দাঁতালটিই জঙ্গলমহলে তাণ্ডব চালানো হাতিদের দলপতি ছিল। তাকে বক্সায় পাঠানোর পরে, জঙ্গল মহলেও হাতির উপদ্রব কমে গিয়েছে। তবে বক্সা থেকে কেন হাতিটি ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে মেঘালয়ে চলে গেল, তার কারণ খুঁজে বার করতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের কথা চলছে।” রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, “দাঁতালটি হয়তো বক্সার জঙ্গলে থাকা বাকি হাতিদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে, নিজের সঙ্গীর খোঁজে এ ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় নবান্নে এক প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে ‘দুষ্টু’ হাতির উপদ্রবের সমস্যা মেটাতে সেগুলিকে উত্তরবঙ্গে পাঠানোর দাওয়াই বাতলে দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অনুমতি মেলায় হাতি ধরার জন্য জলদাপাড়া থেকে দুই কুনকি হাতি নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জ়ুলজিকাল পার্কে। তার পরে বছর কুড়ির ‘দুষ্টু’ পুরুষ দাঁতালকে ‘ট্র্যাক’ করা হয়। ঘুমপাড়ানি ‘ডার্ট’ ছুড়ে সেটিকে কাবু করে বক্সার জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়।
বন দফতর সূত্রের খবর, গত ১৫অক্টোবর ‘রেডিয়ো কলার’ পরানো ওই হাতিটিকে বক্সার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে, সে হাতির আচরণ বক্সার বনকর্তাদের কাছে সন্তোষজনকই ছিল। অন্য হাতিদের দলের সঙ্গে সেটিকে ঘুরে বেড়াতে কিংবা খাওয়া-দাওয়া করতেও দেখেছিলেন বনকর্মীরা। কিন্তু বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক এ ভাবে চলার পরেই, বক্সার জঙ্গল পার করতে শুরু করে দাঁতালটি। সংকোশ নদী, মানস জঙ্গলের পরে, ব্রহ্মপুত্রও পার করে সে। চলে যায় মেঘালয়ে।