আসান শেখ। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে সীমান্তের কাঁটাতার। পাশেই বিএসএফ ছাউনি। কিছুটা দূরে কালমাটি বাজার। এই দুইয়ের মধ্যে একচিলতে জমিতে টিনে ঘেরা ঘর। সেখানেই দিন কাটে আসান শেখের। দুই ছেলে, ছেলের বৌ, দুই নাতি-নাতনি সংসারে। স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে দিন কয়েক আগে। চাষবাসেই চলে সংসার। নিজের জমি নেই। বয়সের ভারে সে ভাবে কাজও করতে পারেন না। এক ছেলে প্রতিবন্ধী। অন্য জন জমিতে কাজ করেন। তা দিয়েই চলে সংসার। বামনহাট দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম কালমাটি। ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে ধীরে ধীরে গোটা এলাকা সবুজে ভরে যায়। পরিবর্তনে কিছু পাওয়ার আশায় ছিলেন আসান। তা পূরণ হয়নি সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধের।
প্রশ্ন: ঘরের আবেদন করেননি?
আসান: কয়েক বার করেছি। বিপিএল তালিকায় আমার পরে নাম থাকা এক জন ঘর পেয়েছেন। ব্লক থেকে শুরু করে মহকুমা, জেলা প্রশাসনে তা-ও জানিয়েছি।
প্রশ্ন: সরকারি সুবিধা কী কী পেয়েছেন?
আসান: সরকারি কোনও সুবিধা আজ পর্যন্ত পাইনি। ঘর যেমন পাইনি তেমন জবকার্ড থাকলেও কাজ পাইনি। প্রশাসনকে জানালেও লাভ হয়নি।
প্রশ্ন: ঘর কেন পাচ্ছেন না?
আসান: সাধারণ মানুষ তাঁদের জন্য আসা সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথা অনেক সময় জানতে পারেন না।
প্রশ্ন: দুয়ারে সরকার চালু হয়েছে সেখানে গিয়ে সমস্যা এবং অভাব-অভিযোগের কথা জানিয়েছেন?
আসান: দুয়ারে সরকার কবে হয় সেটাই কেউ জানান না। তাই যেতেও পারি না।
প্রশ্ন: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে?
আসান: না। কোথায় হয় জানি না। কেউ বলেননি। স্ত্রী কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিল। টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারিনি।
প্রশ্ন: একটি ঘরে সকলে থাকেন?
আসান: ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই। সরকারি ঘরও পাইনি।
ওই গ্রামেরই আফিয়া বিবির অবস্থা একই রকম। স্বামী প্রতিবন্ধী। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা রয়েছেন আফিয়ারও।
প্রশ্ন: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছেন?
আফিয়া: না। কেউ কার্ড করার কথা বলেনি।
প্রশ্ন: ঘর একটাই। কী ভাবে থাকেন?
আফিয়া: ঘরের জন্য পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনে অনেক বার জানিয়েছি। লাভ হচ্ছে না।
প্রশ্ন: সংসার কীভাবে চলে?
আফিয়া: রেশনের চাল, গমে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি।
প্রশ্ন: একশো দিনের কাজ পান?
আফিয়া: স্বামীর নামে জবকার্ড থাকলেও বছর কয়েক ধরে কাজ নেই।
প্রশ্ন: উজ্জ্বলা গ্যাস পেয়েছেন?
আফিয়া: কখনও ঘুঁটে কখনও খড়ি দিয়ে রান্না করি। ওই গ্যাস কী তা-ই জানি না।
(পরবর্তী ‘দর্পণ’ সোমবার)