নির্বিকার: দোকানের ছাউনি থেকে ক্রেতার হাত। যথেচ্ছ প্লাস্টিক মেলায়। নিজস্ব চিত্র
অভিযোগটা একেবারেই মানতে চাইলেন না কোচবিহারের পুরপ্রধান ভূষণ সিংহ। বরং জানিয়ে দিলেন, মঙ্গলবার তিনি নিজেই অভিযান চালিয়েছেন রাসমেলায়। কিন্তু বুধবার মেলা চত্বর ঘুরেও তার কোনও প্রভাব দেখা গেল না। উল্টে চারদিকে শুধু প্লাস্টিকের রমরমাই চোখে পড়ল।
খাবারের স্টলে, জামা-কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের হাতে নির্বিকার ভাবে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। রাসমেলায় একটু দাঁড়িয়ে থাকলেই চোখে পড়ছে, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ হাতে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন অনেকে। অথচ মেলায় দোকানের অনুমতি নেওয়ার সময়ই প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয় প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে। তার পরেও কারও হুঁশ নেই। অভিযোগ, প্লাস্টিক রুখতে তেমন নজরদারিও নেই।
সেটাই মানতে চাইলেন না পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি নিজে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধে অভিযান চালিয়েছেন। বেশ কিছু প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “টানা নজরদারি চলবে। এক দোকানে দু’বার প্লাস্টিক পেলেই জরিমানা করা হবে।”
পুরসভা কোচবিহারে প্লাস্টিক বন্ধে একাধিক বার অভিযানে নেমেছে। কিন্তু কিছু দিনের জন্য প্লাস্টিক বন্ধ থাকলেও ফের ব্যবহার শুরু হয়েছে। গত বারের রাসমেলাতেও প্লাস্টিক রুখতে উদ্যোগী হয় পুরসভা। গত বার প্রায় প্রতিদিন অভিযান চলে পুরসভার পক্ষ থেকে। প্রচুর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ উদ্ধার হয়। অবশ্য তার পরেও প্লাস্টিক মুক্ত মেলা দেখা যায়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মেলার পরে প্লাস্টিক, থার্মোকলের ছড়াছড়ি হয়। যা পরিবেশের ক্ষতি করে। এ বারে তাই শুরু থেকেই প্লাস্টিক মুক্ত মেলার ঘোষণা করে ময়দানে নামে পুরসভা। কিন্তু পরিস্থিতি এতটুকু পাল্টায়নি। মেলার মাঠ থেকে মদনমোহন বাড়ির রাস্তায় বহু দোকানেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বুধবার মেলায় গিয়ে দেখা যায়, খাবার থেকে শুরু করে জামাকাপড়, ঘর সাজানোর জিনিস প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই ভর্তি করেই মেলায় ঘুরছেন একাধিক গ্রাহক। বিমান দে নামে ওই ব্যক্তি বলেন, “ব্যাগ আনিনি। তাই ক্যারিব্যাগ চাইলাম। পেয়ে গেলাম। তাই নিয়ে যাচ্ছি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, “গ্রাহকরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চাইছেন। না পেলে পাশের দোকানে চলে যাচ্ছেন। তাই লুকিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিতে হচ্ছে।” কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক চাঁদমোহন সাহা বলেন, “নিয়ম ও আইন সবাইকে মেনে চলতে হবে। প্রশাসন, পুরসভাকে সহায়তা করব।”
পরিবেশপ্রেমীদের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা দরকার। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প তুলে দিতে হবে। বিকল্প পাচ্ছে না বলেই অনেকে বিপদ বুঝেও ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছে।