১২৫ থেকে সোজা ৪০

গাড়ি কেনার সময় প্রত্যন্ত এলাকার অনেক খদ্দের শিলিগুড়ির শোরুমে আসেন। তাদের ভাবনা ছিল, শোরুম বাড়ালে বিক্রি আরও

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পর পর তিন জন ক্রেতা আলাদা ভাবে গাড়ি কেনার কথা পাকা করে জানিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আর আসছেন না তাঁদের কেউ-ই। তাঁরা আর আসবেন কি না, বুঝে উঠতে পারছেন না মাটিগাড়ার পরিবহণ নগরে অনেক পুরনো একটি গাড়ির শোরুমের জেনারেল ম্যানেজার অর্চনা দিয়াজ। অর্চনা জানান, পুজোর মুখে এই সময়টা গাড়ির বাজারের মরসুম বলেই বিবেচিত হয়। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে অফ সিজিনকেও হার মানাচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁদের শোরুম থেকে ১২৫টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। এ বছর সেখানে এখন পর্যন্ত ৪০টি গাড়ি বিক্রি। মাস শেষ হতে হাতে দশ দিনও নেই। অর্চনা বলেন, ‘‘অনেক বছর পর ভাল খরচ করে অফিস সংস্কার করে ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে। তার পর এই পরিস্থিতির জেরে এখন কর্মী ছাঁটতেও হয়েছে। এক কাস্টমার গাড়ির বুকিং করে পর দিন ফোন করে বলছেন ইনভয়েস এখন করবেন না। জিএসটি কী দাঁড়ায় দেখে আপনাকে বলছি। এমন অবস্থা।’’

Advertisement

এই পরিস্থিতি তাঁদের একার নয়। অন্য গাড়ির কোম্পানির শোরুমগুলোতেও। শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গে গাড়ি বিক্রির বড় বাজার। কলকাতার পরেই রাজ্যের এই শহরের বাজার কোম্পানিগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিড়িগুড়িতে ছোট গাড়ির, বাইকের শোরুমগুলোর সব ডিলার রয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলোতে। জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, বীরপাড়া, জয়গাঁ, কোচবিহার, ইসলামপুর, ডালখোলার মতো বিভিন্ন শহরে। সব মিলিয়ে তাদের গাড়ির বাজার রমরমা ছিল। কিন্তু মার্চের পর থেকেই তাতে কোপ পড়েছে। মাটিগাড়ায় এশিয়ান হাইওয়ে-২-এর ধারে দেশের সবচেয়ে বেশি বিক্রি ছোট গাড়ির একটি বহুতল শোরুম রয়েছে। সেবক রোডে তাদের আরেকটি শোরুম আছে। কোম্পানির, একটি সূত্রের খবর, ফি মাসে তাদের বিক্রি ছিল সব মিলে ৪০০-৪৫০ গাড়ি। গত কয়েক মাসে তা পড়তির দিকে। সেপ্টেম্বরে এখনও পর্যন্ত তিনশোর মতো গাড়ি বিক্রি হয়েছে।

মাটিগাড়ায় ওই শোরুমের কাছেই দেশের একটি জনপ্রিয় গাড়ি নির্মাতা শো-রুম। তারাও হাহুতাশ করছে। ওই শোরুমের মার্কেটিং টিম লিডার বাপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, গত ১০ বছরে শিলিগুড়িতে তাঁদের গাড়ি বিক্রির হাল এত খারাপ হয়নি। মাসে গড়ে ১৫০ গাড়ি বিক্রি কমে এখন মাসে ৭০টি বিক্রি হচ্ছে। জয়গাঁ, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মাথাভাঙাতে তাদের সাবডিলার রয়েছেন।

Advertisement

গাড়ি কেনার সময় প্রত্যন্ত এলাকার অনেক খদ্দের শিলিগুড়ির শোরুমে আসেন। তাদের ভাবনা ছিল, শোরুম বাড়ালে বিক্রি আরও

কিছুটা বাড়ানো যাবে। সেই মতো শোরুম বাড়ানোও হয়েছিল। কিন্তু এখন বাজার তলানিতে। ছোটগাড়ি প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানির শিলিগুড়িতে থাকা শোরুমগুলোর মালিক বা মার্কেটিং ম্যানেজারদের কথায়, অটোবোমাইলে দেশের সরকার কোনও ছাড় দিচ্ছে না। হোটেল, কর্পোরেট সেক্টরে ছাড় মিলছে। কিন্তু গাড়ির তৈরি শিল্পে ছাড় নেই। তার ফলে কোম্পানিগুলো গাড়ির দাম কমাতে পারছে না।

মানুষের রোজগারে টান পড়েছে। হাতে অর্থও কম। অনেকের কাছে অর্থ থাকলেও খরচ করতে সাহস পাচ্ছেন না। তারই ছাপ পড়ছে গাড়ি শিল্পেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement