সংগৃহীত চিত্র।
এ বার দলের নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ উঠল পর্যটন ব্যবসাকে ঘিরেও। অভিযোগ, শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন (এনজেপি) এলাকায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘পর্যটন সহায়ক’ নামে দিয়ে একদল যুবক ইউনিয়নের নামে টাকা তুলছে। গাড়ি, হোটেল বুকিং, ট্যুর বুকিংয়ের মতো কাজের জন্য নির্দিষ্ট কমিশন ছাড়াও বছরে ও মাসে ইউনিয়নের নামে আলাদা টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি ‘ওয়েলফেয়ার ফান্ডের’ নামে ওই সহায়কেরা আরও টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গোটা বিষয়টিই চলছে শাসকদলের আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের একাংশ নেতার মদতে। এ দিকে, প্রতিবাদ করলে বা টাকা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকির ভয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কেউ যাননি। অবশেষে, স্থানীয় ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এবং আইএনটিটিইউসির স্থানীয় নেতাদের দ্বারস্থ হন জোটবদ্ধ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লিখিত ভাবে তাঁরা পর্যটন মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেছেন, ‘‘দলের নামে টাকা তোলা দূরের কথা, কোনও বেআইনি কাজ চলবে না। তা হলে পুলিশ-প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ওই ব্যবসায়ীদের কী অভিযোগ ও সমস্যা রয়েছে তা দেখব।’’
উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে গুয়াহাটির পরেই এনজেপি স্টেশন সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম। ৮০টির মতো আপ ও ডাউন ট্রেন রোজ এখান দিয়ে যাতায়াত করে। একে কেন্দ্র করেই সিকিম, দার্জিলিং থেকে ডুয়ার্স— সারা বছরের পর্যটন মরসুমে পর্যটকেরা আসেন। তাঁদের অনেকে আগাম বুকিং করে উত্তরবঙ্গে ঘুরতে আসেন, অনেকে স্টেশন নেমে গাড়ি, হোটেল বা প্যাকেজের খোঁজ করেন। স্টেশন লাগোয়া চত্বরে ৩০টি মতো পর্যটন সংস্থা রয়েছে। তাঁরা ওই বুকিংয়ের কাজ করেন। এ দিকে, বাম আমল থেকে স্টেশন চত্বরে এজেন্ট বা দালাল-রাজের অভিযোগ রয়েছে। গত কিছুদিন ধরে এদেরই একাংশের নামকরণ হয়েছে ‘পর্যটন সহায়ক’। যদিও তার কোনও সরকারি বৈধতা নেই। সব মিলিয়ে এনজেপিতে বর্তমানে ১৮০ জন ‘সহায়ক’ রয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই সহায়কদের বেশিরভাগেরই পর্যটন সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। অনেক সময়েই তারা পর্যটকদের বিভ্রান্ত করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের ছাতার তলায় থাকায় এদের ছাড়া ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোটেল বুকিংয়ের জন্য ১৫ শতাংশ এবং প্যাকেজ ট্যুরে এদের ১০ শতাংশ টাকা দিতেই হয়। ইউনিয়নের মাধ্যমে এদের প্রতিটি দফতরে রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য ইউনিয়নকে সহায়ক পিছু ৫-১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আবার বছরে এক-এক জনের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। কিছুদিন থেকে আবার দেড় হাজার টাকা ওয়েলফেয়ার ফান্ডের নামে চাওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে আইএনটিটিইউসি-র ব্লক সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘‘দলের নামে কোনও টাকা ওঠে না। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কিছু করলে আমাদের কিছু করার নেই। ব্যবসায়ীরা আমাদেরও চিঠি দিয়েছেন।’’