ফাইল চিত্র।
গৌর আচার্য
রায়গঞ্জের শক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় ভ্যানচালক বিষ্ণু পাসোয়ানের মেয়ের বয়স ৬ বছর, ছেলের ৩ বছর।
বিষ্ণুর দাদা লাল পাসোয়ান বলেন, “করোনা আবহে আর্থিক অনটনের জেরে ভাই গত দেড় বছর ধরে ওর ছেলেমেয়েকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে পারছে না। করোনা আবহ শুরু হওয়ার পরেও প্রতিমাসে ওই কেন্দ্র থেকে ওদের বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হত। কিন্তু জানুয়ারি মাসের পর থেকে ওই কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। ফলে সেই থেকে বাচ্চাদুটো কোনও খাবার পাচ্ছে না।”
জেলার নয়টি ব্লকের ৩৭৮৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও প্রসূতি মিলিয়ে ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার ১৬৩ জন বাসিন্দাকে পুষ্টিকর রান্না করা খাবার বিলি করা হয় বলে জেলা সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের দাবি। করোনা আবহ শুরু হওয়ার পর রান্না করা খাবারের বদলে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী বিলির কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে সেই সব খাদ্যসামগ্রী বিলিও বন্ধ হয়ে রয়েছে। জেলায় অপুষ্টিতে ভোগা প্রসূতি মা ও শিশু মিলিয়ে পাঁচশো জনেরও বেশি বাসিন্দা রয়েছেন।
করণদিঘির আলতাপুর এলাকার বাসিন্দা আড়াই বছরের শিশু ঋষি হাঁসদা দীর্ঘদিন ধরে অপুষ্টিতে ভুগছে। ঋষির মা বুধি হাঁসদা বলেন, “অপুষ্টির জেরে আমার ছেলে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। বাড়ির পাশের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি পাঁচ মাস বন্ধ। ফলে টাকার অভাবে ছেলেকে পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়াতে পারছি না।”
জেলা সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক পার্থ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, আজ, বুধবার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জেলার নয়টি ব্লকের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও প্রসূতিদের ২ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে আলু ও ৩০০ গ্রাম করে মুসুর ডাল বিলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্যসামগ্রীর ওই তালিকায় ডিম, সয়াবিন ও ছোলা না থাকায় করোনা আবহে শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও প্রসূতিদের পুষ্টির ঘাটতি কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের চিকিৎসক বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “করোনা সংক্রমণ রুখতে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে চিকিৎসকেরা বাসিন্দাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ডিম, সয়াবিন ও ছোলার পুষ্টিগুণ অপরিসীম।”