অসুস্থ অমুদার পাশে দাঁড়াতে সুস্থ রাজনীতি

ভোটের ফল বেরোনোর মুখে রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের পরিচয় পেল শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সেনাপতিরা। যেন শুরু হয়েছে রাজনীতির সুস্থ প্রতিযোগিতাও।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০২:২৯
Share:

ভোটের ফল বেরোনোর মুখে রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের পরিচয় পেল শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সেনাপতিরা। যেন শুরু হয়েছে রাজনীতির সুস্থ প্রতিযোগিতাও।

Advertisement

এ বারের পুরভোটের অরবিন্দবাবু ওরফে শিলিগুড়ির প্রিয় অমুদার সমর্থনে শিলিগুড়িতে বোর্ড গঠন করে বামেরা। এই অমুদাই কিন্তু ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের গৌতম দেবের প্রচারে সেনাপতির ভূমিকা নিয়েছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল ছেড়ে পুর নির্বাচনে নির্দল হিসাবে জিতেছিলেন। বামেরা ৪৭ আসনের মধ্যে ২৩টি পায়। নির্দল অমুবাবুর সমর্থনে মেয়র হয়ে বোর্ড গড়েন অশোক ভট্টাচার্য। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী অমুদা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

গত শনিবার এক পরিচিতের কাছে অমুবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়েছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তিনি নিজেও অসুস্থ। উত্তরবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোট প্রচারের সময়েই তাঁর পেটের রোগ শুরু হয়। প্রচণ্ড গরমে শেষ দফায় কোচবিহারে প্রচার চালানোর সময় রোগও বাড়ে। আপাতত চিকিৎসকের পরামর্শে দিল্লিতে নিজের বাড়িতে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন বিজেপির সাংসদ। কিন্তু অমুবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়ে নিজেই ফোন করেন।

Advertisement

চিকিৎসকরা প্রাথমিক ভাবে ক্যানসার সন্দেহ করছেন শুনেই অহলুওয়ালিয়া তাঁকে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে ভর্তির পরামর্শ দেন। সাংসদের কথায়, ‘‘তবে পরামর্শ দিলেই তো হবে না, মুম্বইয়ের ওই কেন্দ্রে ভর্তি হতে দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। ওই কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, শিগগিরি ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসার সুযোগ নেই।’’ এরপরেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন সাংসদ অহলুওয়ালিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘অমুবাবুর শারীরিক যা পরিস্থিতি, তাতে দেরি করা কোনও ভাবেই উচিত হবে না।’’ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অহলুওয়ালিয়া। তাতেও কিছুটা সময় লাগার আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সাংসদ জানিয়েছে, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ নিজেই ওই সংস্থার অধিকর্তা কৈলাশ শর্মাকে ফোন করে অরবিন্দবাবুর জন্য ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ চান। তারপরে আর অপেক্ষা করতে হয়নি বলে সাংসদ জানিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার বিকেলে অমুবাবু ওই কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘আমি সামান্য চেষ্টা করেছি। এটা সংবাদমাধ্যমে বলার মতো বিষয় নয়। এটাই কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দস্তুর। এর সঙ্গে ভোট, জোট বা গণনার সম্পর্ক নেই।’’

অমুবাবুর জন্য মুম্বইয়ের মহিম ওয়েস্ট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ নিয়ে রেখেছিলেন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। এক সময়ে মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকার উন্নয়নের কাজকর্ম দেখভাল করতেন অমুবাবুই। পরে মন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়। অমুবাবুর অসুস্থতার খবর পেয়ে গৌতমবাবু কলকাতা এবং মুম্বইয়ের টিকিটের ব্যবস্থা করেন। যদিও, তার আগেই অমুবাবুর পরিবারের সদস্যরাই টিকিট জোগাড় করে রেখেছিলেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে কথা বলে কলকাতাতেও কিছু টেস্ট করানোর ব্যবস্থা রেখেছিলেন গৌতমবাবু। মন্ত্রী বলেন, ‘‘অমুবাবুর সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। আজও দু’বার কথা হয়েছে। মুম্বইয়ের হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরুর পরেও কথা হয়েছে। অমুবাবুর জন্য মুম্বইয়ের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছি। ওঁর বা ওঁর পরিবারের মুম্বইতে থেকে চিকিৎসা করাতে কোনও রকম অসুবিধা যাতে না হয়, তার যাবতীয় চেষ্টা করছি।’’ গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘আমি কোনও ব্যতিক্রমী কাজ করিনি। যে রাজনৈতিক পরিবেশ ছোট থেকে দেখে এসেছি, এটা তারই অঙ্গ।’’

একই সুরে কথা বলেছেন অশোকবাবুও। মেয়র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলেও ফোনে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরসভার তরফে টাকার ব্যবস্থা করা হবে। আমি কয়েক দিনের মধ্যেই মুম্বইয়ে যাব। সব সময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠেই আমরা কাজ করি।’’ কংগ্রেসের নেতা শঙ্কর মালাকারও বলেছেন, ‘‘তাঁকে সুস্থ করে তুলতে সমস্ত ধরনের সাহায্য করব। ভোটের সময়ে লড়াই। তার পর হানাহানি এড়ানোই সুস্থতা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement