ধৃত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মৃত ছাত্রীর প্রতিবেশীদের বিক্ষোভে সোমবার ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালত চত্বর। দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র বাণিজ্য কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শঙ্কর চন্দকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ‘প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের’ ১৪ নম্বর ধারায় মামলাটি এদিন বিশেষ আদালতে ওঠে। সরকারি আইনজীবী সোমনাথ পাল বলেন, “বিচারক অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অভিযুক্তের পক্ষে আইনজীবী ছিল না।”
মৃত ছাত্রীর পরিবারের আইনজীবী সুজিতকুমার সরকার জানান, ধৃত যুবক কলেজের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামিন দেওয়া হলে তিনি মামলায় প্রভাব খাটাতে এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করতে পারেন। ওই কারণে আদালতের কাছে ধৃতকে জেলে রেখে বিচার করার আবেদন জানানো হয়েছে।
এ দিন বেলা ২টো নাগাদ ৩ নম্বর গুমটি এলাকার শতাধিক বাসিন্দা মৃত ছাত্রীর ছবি দেওয়া ফ্লেক্স নিয়ে ধৃত ছাত্র নেতার ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আন্দোলনে সামিল হন মৃত ছাত্রীর মাও। তিনি বলেন, ‘‘আমার একমাত্র মেয়ে চলে গেল। অন্য কোনও মায়ের কোল যেন এ ভাবে যাতে ফাঁকা না হয়, সে জন্য অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া দরকার।’’ এর আগে একই দাবিতে গত শুক্রবার আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা মোমবাতি মিছিল করেন।
পুলিশ জানায়, শহরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা ধৃত তৃণমূল ছাত্র নেতার সঙ্গে ৩ নম্বর গুমটি এলাকার বাসিন্দা মৃত ছাত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীটি বাড়িতে ওড়নার ফাঁসে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রায় এক মাস জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিত্সার পরে গত ২৪ মার্চ ছাত্রীটি মারা যান। গত ২৫ মার্চ রাতে তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে পরের দিন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শঙ্কর চন্দকে কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের পুলিশ গ্রেফতার করে।
শুক্রবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে ছাত্রীর পরিবারের নতুন কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বিচারকের কাছে মামলায় ‘প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের’ ১৪ নম্বর ধারা যুক্ত করার আবেদন জানায়। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করে। কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের ওসি কেএল শেরপা জানান, ওই ছাত্রীর বয়স ১৮ বছর হয়নি। তাঁর বয়স ১৭ বছর ১১ মাস। তাঁর পরিবার থেকে ধৃতের বিরুদ্ধে সহবাসের আরও কিছু নতুন অভিযোগ মিলেছে। ওই কারণে নতুন ধারা সংযোজন করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল।
ছাত্রীর পরিবারের আইনজীবী সুজিতকুমার সরকার জানান, অভিযুক্ত যুবক ছাত্রীটির সঙ্গে সহবাসের পরে যে আপত্তিজনক ছবি মোবাইল ফোনে তুলেছে, সেই বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। প্রথমে বিয়ের আশ্বাস দিলেও অভিযুক্ত পরে তা অস্বীকার করেন। আবার ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করেন। এদিন আদালতে নিয়ে আসার পথে অভিযুক্ত ছাত্র নেতা শঙ্কর কথা বলতে অস্বীকার করেন। একই ভাবে আদালতে থাকলেও কথা বলতে চাননি মৃত ছাত্রীর বাবা।