দু’চাকার গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তৎকাল পরিষেবা পেতে হলে ১২০০ টাকা বা তারও বেশি। চার চাকার জন্য হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। তৎকাল পেতে হলে দু’হাজার টাকার বেশি। আবার কেউ যদি গাড়ি বা বাইক চালানোর পরীক্ষা না দিয়েই লাইসেন্স চান তাহলে দরদাম করে আরও বেশি টাকা খরচ করতে হবে। এ কোনও সরকার নির্ধারিত লাইসেন্সের ফি নয়, শিলিগুড়ির পরিবহণ দফতরের অফিসের দালালচক্রের রমরমার জেরে এমনই চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, দফতরে ঢুকলেই বিভিন্ন ঘরে একাধিক বহিরাগতদের আনাগোনা এবং খোঁজখবরের মুখে বাসিন্দাদের পড়তে হয় বলেও অভিযোগ। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা বহু ভুক্তভোগী বাসিন্দার অভিযোগ, নিয়ম মেনে আবেদন করে লাইনে দাঁড়ালে হয়রানির শিকার হতে হয়। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ সময় বাঁচাতে এই দালাল চক্রেরই দ্বারস্থ হন।
এই অভিযোগ সত্যি নয় বলে দাবি করেছে। পরিবহণ দফতরের শিলিগুড়ির সহকারি রোড ট্রান্সপোর্ট অফিসার (এআরটিও) সোনম ভুটিয়া। তবে এমন অভিযোগ তিনিও শুনেছেন বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তবে তাঁর কাছে কেউ নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাননি বলে দাবিও করেছেন। জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘এ ধরণের অভিযোগ যাতে না আসে সে কারণে শিলিগুড়ির এআরটিও দফতরে সিসিটিভি বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মীদেরও বায়োমেট্রিক উপস্থিতি ব্যবস্থাও চালু করা হচ্ছে। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপপ্রিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকরে দজতরের মধ্যে এআরটিও দফতরটি রয়েছে। মহকুমাশাসক জানান, ‘‘আমার দফতরে সাধারণ লোকজন আসেন। তাঁদের মধ্যে কে কী উদ্দেশ্য নিয়ে আসে তা বলা মুশকিল। তবে সরকারি কাজে কর্মচারী ছাড়া কেউ হস্তক্ষেপ করে না। শিবমন্দিরের এক বাসিন্দা, কর্মসূত্রে মুম্বই থাকেন। তাঁর দু’চাকার লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তিনি লাইসেন্স নবীকরণ করার সঙ্গেই চার চাকার যানের জন্যও লাইসেন্স নিতে আবেদন করেন। তিনি জানান, তিনদিন ধরে ওই দফতরে যাচ্ছি। কখনও একটি কাউন্টার বন্ধ, কখনও মেশিন খারাপ শুনতে হচ্ছে। নাজেহাল হয়ে চেঁচামেচি করাতে একজন ভিড়ের মধ্যে থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি ৩ হাজার চেয়ে নম্বর দেন। দু’দিন পরে ফোন করে লাইসেন্স নিয়ে যেতে বলেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওই ব্যক্তি জানায়, তিন মাসের আগে লাইসেন্স পাবেন না।
আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী বাসিন্দা জানান, মহকুমা শাসকের দফতরের গেটের সামনে অনেকে টেবিল চেয়ার পেতেই বসেন। সেখান থেকেও পরিবহণ দফতরের কাজকর্মও বেশি টাকা দিয়ে দ্রুত করানো যায়। দার্জিলিং জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ কেউ দেন না। তাই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক ও আরটিওর সঙ্গে কথা বলব।’’
পরিবহণ দফতরের কয়েকজন অফিসার জানান, সরকারি নিয়মে দুই চাকার লাইসেন্সের জন্য ১৩০ টাকা এবং চার চাকার জন্য ১৮০ টাকা জমা দিতে হয়। কাগজপত্র জমা দেওয়ায় লার্নার লাইসেন্স মেলে। এর এক মাস পর গাড়ি চালানোর পরীক্ষা দেওয়ার একমাসের মধ্যে লাইসেন্স আবেদনকারীকে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে দুই মাস সময় লাগে। নবীকরণ করাতে গেলেও মাস খানেক সময় লাগে। সেখানেই কয়েকদিনের মধ্যেই কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই দালাল চক্রের লোকজন মোটা টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘ওই চক্রের পরিবহণ দফতরের কর্মীদের একাংশ নিশ্চয়ই জড়িত আছেন। নইলে এত সহজে দালালদের পক্ষে কাজ হাসিল করা সম্ভব নয়।’’