উদ্ধার: সিতাই থেকে মিলেছে এমন অস্ত্রই। নিজস্ব চিত্র
দিনহাটায় যুব তৃণমূল-তৃণমূল সংঘর্ষে ইতি টানতে চ্যাংরাবান্ধায় বসে মঙ্গলবারই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি উত্তরবঙ্গে থাকাকালীনই ফের সংঘর্ষ দিনহাটার সিতাইয়ের নতুনবাজারে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক পুলিশকর্মী।
দলীয় সূত্রের খবর, ২১ জুলাই কলকাতায় শহিদ স্মরণসভা উপলক্ষে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলের জন্য জমায়েত হয় নতুনবাজারে। তখন আরেকটি গোষ্ঠী তাঁদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। যুব তৃণমূলের অভিযোগ, মিছিলের উপর তৃণমূলের লোকজন হামলা করেছে। হামলাকারীরা সকলেই সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়ার লোকজন বলে দাবি তাঁদের। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নিশীথ প্রামাণিকের লোকজনই গুলি চালিয়েছে।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “দুষ্কৃতীদের একটি দল জমায়েত হয়েছিল একটি জায়গায়। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।” বিরোধীদের অভিযোগ, ওই ঘটনা যুব-আদি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। তবে দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি ও বিরোধীরা এর সঙ্গে যুক্ত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” পুলিশ সূত্রের খবর, জখম পুলিশকর্মীর নাম পরিমল সরকার। তিনি দিনহাটার এসডিপিও কে উমেশ গণপতের দেহরক্ষী। পুলিশ ওই ঘটনায় প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তার মধ্যে চারটি ওয়ান শটার রয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে। পুলিশ মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই ঘটনা যুব-আদি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। তাতেই অনেকে জখম হয়েছে।
তবে ঘটনাস্থল থেকে এত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলার তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, আদি ও যুব’র গোলমাল অনেক জায়গাতেই চলছে। তবে এ ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা নিয়ে লড়াই ভয়ানক। এখনই দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামিদিনে পরিস্থিতি সামালানো যাবে না।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বার বার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিনহাটা। তৃণমূলের এক কর্মী খুন হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও কয়েকজন। এ ছাড়া দেদার গুলি-বোমা চলেছে। অভিযোগ, পুলিশ তেমন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনহাটায় গন্ডগোল বেড়ে চলেছে। মঙ্গলবার চ্যাংরাবান্ধায় মুখ্যমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেই এ দিন থেকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই ঘটনায় ধৃতরা নিজেদের রাজনৈতিক কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছে। তদন্তে জানা গিয়েছে সবাই দুষ্কৃতী।”
বিবদমান দুই পক্ষই ঘটনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইছেন। সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা হয় বলে শুনেছি।” আর জেলার যুব সাধারণ সম্পাদক নিশীথ প্রামাণিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঐক্যের বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। তার পরেও কেউ গোলমাল করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’