সৈকত চট্টোপাধ্যায়।
জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের পরে, এ বার শিলিগুড়ির এক তৃণমূল নেতার ‘উধাও’ হওয়া নিয়ে চর্চা শুরু হল। তিনি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা দার্জিলিং জেলা (সমতল) তৃণমূলের সহ-সভাপতি আইনুল হক। এক বিজেপি কর্মীকে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় আইনুলের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে। আইনুলের আগাম জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত। আইনুলের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিজেপি।
ঘটনার সূত্রপাত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ভোটের দিন দু’য়েক আগে। অভিযোগ, ফাঁসিদেওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দেমনাখালি এলাকার বিজেপি কর্মী অপু বিশ্বাস বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘোরার সময় সদলবল আইনুল এলাকায় গিয়ে অপুকে খুনের হুমকি দেন এবং নানা ভাবে হেনস্থা করেন। গত বছরের ২৫ জুন রাতের ঘটনা। অপু বাধা দিলে, প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে, তাঁকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় এবং বুকে লাথি মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। চিৎকারে ঘটনাস্থলে এলাকার লোকজন জড়ো হওয়ার আগেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে যান বলে দাবি। অপুকে প্রথমে ফাঁসিদেওয়া গ্রামীণ হাসপাতালে এবং পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল। ২৬ জুন সেখানেই অপুর মৃত্যু হয়। পরিবার সূত্রে খবর, অপুর হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল। সে বছরই মে মাসে তাঁর অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। বুকে ‘পেসমেকার’ বসানো ছিল। আইনুলের সঙ্গে ১০ জনের নামে ফাঁসিদেওয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অপুর স্ত্রী শোভা চৌধুরী। জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হয়। আগাম জামিনের আবেদন করে জলপাইগুড়ি সার্কিটের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন আইনুল। গত ১৩ জুন আইনুলের জামিন নাকচ করা হয়। সে দিন থেকে এলাকায় আইনুলকে আর দেখা যায়নি বলে দাবি। আইনুলের ফোন বন্ধ, মেসেজেরও উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও অপুর স্ত্রী শোভার দাবি, ‘‘উনি এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও, পুলিশ গ্রেফতার করছে না। আমরা শাস্তি চাই।’’
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়। মন্তব্য করব না। তবে অভিযোগ ওঠা মানেই, কেউ দোষী হয়ে যান না। আইন আইনের পথে চলবে। তার পরে, রাজ্য নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, সে ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
দম্পতিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে পুলিশি তল্লাশি জারি রয়েছে। এ বার আইনুলকে গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি জারির দাবি তুলেছে বিজেপি। বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আনন্দময় বর্মণ বলেন, ‘‘প্রশাসন প্রশ্রয় দিচ্ছে তৃণমূলের গুন্ডাদের। আমরা গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে নামব।’’ আইনুলের আইনজীবী হিল্লোল সাহা পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’