নকশালবাড়ি থানা (বাঁ দিকে), মাটিগাড়ায় মৃতার বাড়িতে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।
মাটিগাড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে আবারও নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উত্তরবঙ্গে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ির একটি চা-বাগান এলাকায় এক নাবালিকাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে নকশালবাড়ি থানা ঘেরাও করেন নির্যাতিতার পরিবার-সহ এলাকাবাসী। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি-সহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পুলিশি হস্তক্ষেপে উত্তেজনা প্রশমিত হয়। পাশাপাশি মূল অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, মাটিগাড়াকাণ্ডে মঙ্গলবারই মৃতার বাড়িতে যান জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নির্যাতিতা নাবালিকার বয়স ১৭ বছর। নকশালবাড়ির চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকার বাবা-মা নেই। দিদি-জামাইবাবুর কাছে থাকে সে। পরিচারিকার কাজ করে সে। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিল ওই নাবালিকা। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক যুবক তার মুখ চেপে ধরে রেললাইন লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত জায়গায় তুলে নিয়ে যায়। পরে সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় এক বাসিন্দার নজরে পড়ার পর তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। ওই নাবালিকাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করার পাশাপাশি তাঁরাই অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতার পরিবার।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম চন্দন কর্মকার। ২৮ বছর বয়সি অভিযুক্ত বিবাহিত। তাঁর একটি সন্তানও রয়েছে। তাঁকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘একটি মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। যা যা নিয়ম রয়েছে, সেগুলো পালন করা হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমারা অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছি। তবে পুলিশ ভাল কাজ করছে।’’ অন্য দিকে, মিতা কর্মকার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘সপ্তাহখানেক আগে এক স্কুলছাত্রীকে খুন করা হল। এ বার আমাদের পাড়ার মেয়ের সঙ্গে একই রকম ঘটনা ঘটল। এক জন মেয়ে হিসাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। আমরা দোষীর ফাঁসি চাই।’’ এই ঘটনা প্রসঙ্গে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশকে একাধিক বার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে অভিযুক্তকে মঙ্গলবারই শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার বিকেলে মাটিগাড়ার মৃতার বাড়ি গিয়েছিলেন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য রূপালী বন্দ্যোপাধ্যায়রা। মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। মাটিগাড়া থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তাঁরা। তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে খোঁজখবর করেছেন। উল্লেখ্য, গত রবিবার সকালে মৃতার বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। তার পরে সে দিনই মৃতার বাড়িতে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।