নথির খোঁজে কাজ ফেলে বিহারে ছুট মেরি, রহিমুদ্দিন, নারায়ণের

নতুন নাগরিকত্ব আইনের জেরে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমা এবং দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ১৯টি মৌজার বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি

নতুন নাগরিকত্ব আইনের জেরে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমা এবং দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ১৯টি মৌজার বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে। নথির খোঁজে তাঁদের যেতে হচ্ছে বিহারে। বিহারে কেন?

Advertisement

বাসিন্দারা জানান, ১৯৫৬ সালে ওই সব এলাকা বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত হয়। ‘স্টেট রি-অর্গানাইনেশন কমিশন’-এর সুপারিশে বিহার থেকে ৭৫৯ বর্গ মাইল এলাকা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। এনআরসি লাগু হলে জমির নথি প্রয়োজন— ভিটেছাড়া হওয়ার আতঙ্কায় বিহারে পুরনো নথির খোঁজে যাচ্ছেন অনেকে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে ওই সব এলাকা ছিল বিহারের পূর্ণিয়া জেলার অধীনে। নথির খোঁজে সেখানকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। শুক্রবার নথির খোঁজে বিহারে গিয়েছিলেন চাকুলিয়ার রমজান আলি। তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। রমজান জানান, পূর্ণিয়ায় সরকারি দফতরে গিয়ে জমির পুরনো নথির আবেদন জানিয়ে এসেছেন। কিন্ত আদৌ তা পাওয়া যাবে কিনা, তা নিশ্চিত করে তাঁকে জানানো হয়নি। তার জেরে চিন্তায় রয়েছেন রমজান।

Advertisement

একই রকম চিন্তায় রয়েছেন ইসলামপুরের প্রবীণ আইনজীবী নারায়ণ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘এই বয়সে পুরনো নথি কী ভাবে উদ্ধার করব? আমরা তো এখানকার ভূমিপুত্র। শরণার্থী নই। প্রয়োজনীয় নথি না দিলে কী যে হবে বুঝতে পারছি না।’’

চিন্তায় কার্যত রাতের ঘুম উড়েছে করণদিঘির বালিয়া গ্রামের মেরি মুর্মুরও। ৭৫ বছরের মেরির সংশয়, ‘‘নথি না পাওয়া গেলে কী হবে?’’ চিন্তিত দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া থানার চটহাটের মইনুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো নথি জোগাড়ে বিহারে যোগাযোগ করছি। কয়েক পুরুষ ধরে এই গ্রামে নিজেদের বাড়ি রয়েছে। তা-ও চিন্তা হচ্ছে খুব।’’

একই রকম সংশয়ে ওই সব এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা। অনেকে বলছেন, ‘‘এখানে অনেক বার বন্যা হয়েছে। কারও নথি বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। কারও নথি পুড়েছে আগুনে। বিশেষ করে গ্রামের প্রান্তিক ছাপোষা মানুষেরা পড়েছেন সঙ্কটে।’’ কেউ কেউ বলছেন, এনআরসি লাগু হলে জমির দলিল, জন্ম শংসাপত্র, শরণার্থী শংসাপত্র, শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্ক আকাউন্ট-সহ ১৪টি নথি লাগবে। কিন্ত অনেকের কাছে সে সব নথি জোগাড় করা সমস্যার।

গোয়ালপোখরের মজলিশপুরের দিনমজুর মহম্মদ রহিমুদ্দিন বলছেন, ‘‘আশঙ্কা ছাড়া আর করার কী আছে। ধান ওঠার মরসুমেও মাঠের কাজ ফেলে আতঙ্কে নথির খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছি।’’ ওই গ্রামেরই ৭৫ বছরের হামিদ রহমান বলেন, ‘‘সাত পরুষ ধরে এখানে বসবাস করছি। এই গ্রামেই বাবা-দাদুরা জন্মেছে। এখন নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আধার কার্ড, জমির দলিল, রেশন কার্ডের জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন নথি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হবে এ দেশের মাটিতে আমার অধিকার কতটা?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement